গোপালগঞ্জে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় গুলিতে যুবক নিহত, আহত ১৫
গোপালগঞ্জে নির্বাচনের পরে চা-সিগারেট খাওয়া নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী বিজয়ী উপজেলা চেয়ারম্যান ও পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ওয়াসিকুর ভুইয়া (২৭) নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এ সময় আরও চারজন গুলিবিদ্ধ এবং অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার (১৫ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে সদর উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে। নিহত যুবক ওয়াসিকুর ভুইয়া চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের আব্দুল জলিল ভুইয়ার ছেলে। তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। নিহতের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আনিচুর রহমান তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ঘটনার খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) কাজী মাহবুবুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. খায়রুল আলম, সহকারী পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) শফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে চন্দ্রদিঘলিয়া বাজারে চা-সিগাটে খাওয়া নিয়ে বিজয়ী উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান ভূইয়া লুটুলের সমর্থক চয়ন ভূঁইয়া ও পরাজিত প্রার্থী বি এম লিয়াকত আলীর সমর্থক সবেদ আলী ভূঁইয়ার মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তা দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে গড়ায়। এ সময় পরাজিত প্রার্থীর সমর্থক ওয়াসিকুরসহ পাঁচজন গুলিবিদ্ধ এবং ১৫ জন আহত হন। রাত সোয়া ৯টাযর দিকে ওয়াসিকুরকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বাকি গুলিবিদ্ধরা হলেন চন্দ্র দিঘলিয়া গ্রামের ফরিদ ভুঁইয়ার ছেলে কলেজ শিক্ষার্থী লিওন ভূঁইয়া (২১) এবং একই গ্রামের কাসেম আলী ভূঁইয়ার ছেলে রজ্জব আলী ভূঁইয়াসহ (২৫) আরও দুজন। তাদেরকে প্রথমে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে লিওন ভূঁইয়াকে রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে এবং রজ্জব আলী ভূঁইয়াকে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।
গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল কর্মকর্তা জুয়েল সরকার বলেন, ‘সোয়া ৯টার দিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাদের মধ্যে ওয়াসিকুর ভূইয়া নামের একজনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তার বাম চোখে গুলি ও মাথায় ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। বাকি দুজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় একজনকে ঢাকা ও আরেকজনকে খুলনা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।’
নিহত ওয়াসিকুর ভূইয়ার মা সবেদা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে উপজেলা নির্বাচনে বি এম লিয়াকত আলীর সমর্থক ছিল। আজ তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’
পরাজিত প্রার্থী বি এম লিয়াকত আলী বলেন, ‘নিহত ওয়াশিকুর ভূঁইয়া আমার একজন সমর্থক ছিলেন। জয়ী প্রার্থীর সমর্থকরা এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের দৃষ্টান্তমূলক আশাস্তি চাই।’
গোপালগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হারুন অর রশিদ বলেন, ‘ওয়াসিকুর ভূঁইয়া নামে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে, এ বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। আমরা এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’