নদী ভাঙনে বাস্তুচ্যূত আট পরিবার, পানিবন্দি শতাধিক
বঙ্গবন্ধু মোংলা-ঘাষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌ ক্যানেলের ভাঙনে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার রোমজাইপুর এলাকায় আটটি পরিবার বাস্তুচ্যূত এবং প্রায় শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে আরও ২০টি পরিবার।
স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সহায়তা পায়নি ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায়, গত ২২ জুলাই রাতে পূর্ণিমার জোয়ারের তোড়ে ভেঙে যায় রোমজাইপুর গ্রামের প্রায় ৫০ মিটার গ্রামরক্ষা বাঁধ। এতে চারটি বাড়ি ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ঝুঁকিতে পড়েছে আরও প্রায় ২০টি বাড়ি। যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে সেসব বাড়িঘর। ভাঙনের ফলে বিদ্যুতের দুটি খুঁটিও উপড়ে পড়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে আরও চার-পাঁচটি খুঁটি। এ ভাঙনে প্রায় দুই কিলোমিটার আধাপাকা রাস্তা ভেঙে গেছে। এতে প্রায় দেড়শ একরের চিংড়ি ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
শুধু তাই নয়, এমতাবস্থায় যাতায়াতের অভাব ও জলাবদ্ধতায় শিশু, বৃদ্ধ ও নারীরা ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন দুবার জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর। এতে এখানকার বাসিন্দারা চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে। চাল-চুলা জ্বলছে না। এক সপ্তাহ গত হলেও কোনো জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কোনো কর্তা ব্যক্তি সরেজমিন যাননি বলে ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করে।
স্থানীয় বাসিন্দা বিভাষ হালদার জানান, অপরিকল্পিত ভাবে বঙ্গবন্ধু মোংলা-ঘাষিয়াখালী আন্তর্জাতিক নৌ ক্যানেল খনন করায় পুরো রোমজাইপুর গ্রামটি একটি দ্বীপ হয়ে গেছে। এতে নদী ভাঙন বেশি হচ্ছে। এখানে সরকারে থাকা লোকজন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
একই কথা বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. বায়েজিদ সরদার। তিনি বলেন, দেড় মাস আগে রেমালের আঘাতে বাঁধ ভেঙে এ গ্রাম তলিয়ে যায়। মানুষের একমাত্র আয়ের উৎস মাছ ভেসে গিয়ে সবাই পথের ফকির হয়ে গেছে। ঠিকমতো দুবেলা এ গ্রামের মানুষ খেতে পারছে না।
স্থানীয় নারী ইউপি সদস্য রীনা বেগম হেনা বলেন, ‘এ গ্রামের প্রায় সব পরিবার দরিদ্র, হতদরিদ্র। রেমালের ক্ষয়ক্ষতির পরে আবার নদী ভাঙনে মড়ার উপর খাড়ার ঘা পড়েছে। বঙ্গবন্ধু মোংলা-ঘাষিয়াখালী ক্যানেলের প্রচণ্ড স্রোতে গ্রামের দুই পাশে তীব্র নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে রশিদ মোল্লা, মিজান মোল্লা, জামাল মোল্লা ও জাহাঙ্গীর শেখের বাড়িঘর ভেঙে গেছে। পশ্চিম পাশে আমার বাড়িটিও ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। আমি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আতঙ্কে আছি। যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।’
এ ছাড়া মুকুল শেখ, ইয়াহিয়া খান, আ. সামাদ গাজী, আ. হালিম খান ও হারুন গাজীর বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। যা কিছু আছে তাও ঝুঁকিতে রয়েছে।
এ বিষয়ে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রহিমা সুলতানা বুশরা বলেন, ‘এ নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য হাবিবুন নাহারের সঙ্গে কথা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গেও কথা বলেছি। তাঁরা আশ্বাস দিয়েছেন দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিবেন।’
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান ইউএনও।