সেনাবাহিনীর সহায়তায় ডিএমপির ২৯ থানার কার্যক্রম শুরু
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের প্রায় চার দিন পর আজ সকাল থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় রাজধানীর ২৯টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। থানাগুলোতে পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতার জন্য নিয়োজিত থাকছেন সেনাসদস্যরা।
আজ শুক্রবার (৯ আগস্ট) শুক্রবার বেলা ১১টায় তেজগাঁও থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা।
এ সময় সেনাবাহিনীর ২৫ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের কোম্পানি কমান্ডার শাখাওয়াত খন্দকার বলেন, ‘সেদিন (৫ আগস্ট) জনমানুষের প্রচণ্ড স্রোত ছিল। তাদের কন্ট্রোল করা তখন ডিফিকাল্ট হয়ে যাচ্ছিল। সাধারণ মানুষের সঙ্গে দুর্বৃত্তরা যেভাবে পুলিশসহ মানুষ হত্যা করছে, তখন আমরা ডিসিশন নিয়েছি থানা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, পুলিশ সদস্যদের বাঁচাতে হবে। তারা জনগণের সেবক, তাদের আবার রিফর্ম করার সুযোগ করতে হবে। এ ছাড়া তেজগাঁও থানায় কয়েকশ পরিবার আছে, পুলিশ সদস্যরা আছে। থানায় অনেক অস্ত্র আছে। যেগুলো দুর্বৃত্তদের কাছে গেলে দেশ চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। তখন আমরা থানার নিরাপত্তা জোরদারের ব্যবস্থা করেছি। ২৯টি থানা খোলা রয়েছে। সেখানে সেনাবাহিনী সহায়তা করছে।’
শাখাওয়াত খন্দকার বলেন, ‘আমরা এ এলাকায় ছাত্র-শিক্ষক, ব্যবসায়ী, স্কাউট, বিএনসিসি ও আনসার বাহিনীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সমন্বয় সভা করেছি। পুলিশ বাহিনীকে রিফর্ম করতে তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’
তেজগাঁও থানার উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) আজিমুল হক বলেন, ‘সামরিক বাহিনীর সদস্য যেভাবে আমাদের পুলিশ সদস্যদের বাঁচাতে এগিয়ে এসেছেন, মানুষের জানমাল রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আজ আমরা সামরিক বাহিনীর সহায়তায় পুলিশের সব কার্যক্রম শুরু করেছি। সব নাগরিকের কাছে অনুরোধ, আপনারা থানায় আসুন। আপনাদের সেবা দিতে আমরা প্রস্তুত।’
আজিমুল হক বলেন, ‘তেজগাঁও বিভাগে ছয়টি থানার মধ্যে তিনটি থানার কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত থানায় স্বল্প পরিসরে কাজ চলছে। এরই মধ্যে থানাগুলোয় অনেক পুলিশ সদস্য কাজে যোগ দিয়েছে। বাকিরাও আসতে শুরু করেছে। আমরা আশা করছি দুপুরের মধ্যে আমাদের সব পুলিশ সদস্য কর্মস্থলে যোগ দেবেন।’
তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘কিছুদিন আগেও আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করেছি। আজ আমাদের অনেক পুলিশ সদস্য আমাদের কাছে নেই। অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আমাদের কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার জন্য আমরা অনেক ভুল করেছি। মানুষের সঙ্গে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আসলে আমরা জনগণের সেবক। জনগণই আমাদের মূল। আপনারা থানায় আসুন। আপনাদের সেবার আমরা প্রস্তুত রয়েছি।’
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালানোর পর দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের ওপর চড়াও হয় জনতা। তাদের দাবি—বিভিন্ন সময়ে এই পুলিশবাহিনী তাদের ওপর অত্যাচার করেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলি চালিয়ে শিক্ষার্থীদের হত্যা করেছে। রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ থানা আক্রান্ত হলে পুলিশ সদস্যরা একরকম অঘোষিতভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। আতঙ্কে গা ঢাকা দেন অনেকে। এর সুযোগ নেয় দুর্বৃত্তরা। বিভিন্ন বাড়িতে চুরি, ডাকাতি ও লুট শুরু করে তারা।