নোয়াখালীতে নতুন গ্যাসকূপের সন্ধান
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ-৪ (পশ্চিম) নম্বর কূপের তিনটি স্তরে গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। এই কূপ থেকে দৈনিক ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লি. (বাপেক্স)।
চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল এ কূপে শুরু হয় খনন কাজ। এখন চলছে সর্বনিম্ন স্তরের প্রোডাকশন টেস্ট। প্রাথমিকভাবে তিনটি স্তরে গ্যাসের সন্তান মিলেছে। টেস্ট শেষে জানা যাবে এখানে গ্যাসের মোট মজুদের পরিমাণ।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন প্রোডাকশন লিমিটেড-বাপেক্সে জানায়, কূপটিতে তিন হাজার ১১৩ মিটার গভীর পর্যন্ত খনন করা হয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ৯২১ থেকে এক হাজার ৯৭৩ ফুট পর্যন্ত প্রথম স্তর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুরুতে এখানে প্রতিদিন ১০ মিলিয়ন গ্যাস জাতীয গ্রিডে যুক্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাপেক্স বলছে, এর আগে নোয়াখালীর এ অঞ্চল তথা বেগমগঞ্জে ১৯৭৬ সালে প্রথম গ্যাসকূপের সন্ধান মেলে। ১৯৭৮ সালে দ্বিতীয় কূপের সন্ধান মিললে সেগুলো খনন করা হয়। তবে পরবর্তীতে ওই দুটি কূপে কোনো গ্যাস পাওয়া যায়নি। ২০১৩ সালে তৃতীয় কূপের সন্ধান মিললে খনন থেকে গ্যাস উৎপাদনে যায়। ২০১৮ সালে একই কূপে ওয়ার্কওভার (আক্রমণাত্মক কৌশল) চালিয়ে এখন প্রতিদিন ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। বেগমগঞ্জ-৪ (ওয়েস্ট) মূল্যায়ন কাম উন্নয়ন কূপ থেকে প্রতিদিন ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে। বাপেক্সের দুই শতাধিক প্রকৌশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক এ কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত রয়েছে।
এদিকে, গ্যাসকে কাজে লাগিয়ে শিল্প কারখানা এবং আবাসিক লাইনে ব্যবহারের দাবি এলাকাবাসীর। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, আমরা চাই গৃহস্থালির কাজে গ্যাস ব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়া হোক। নোয়াখালীর গ্যাসের মাধ্যমে নোয়াখালীর উন্নয়ন সম্ভব। গ্যাসের সম্ভাবনাকে কাজে লাগালে জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বেকার যুবকদেরও কর্মসংস্থান হবে। একটি উন্নত সমৃদ্ধ জেলায় পরিণত হবে নোয়াখালী।
বেগমগঞ্জ-৪ (ওয়েস্ট) মূল্যায়ন কাম উন্নয়ন কূপ খনন অধিকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, কূপের প্রতিটি স্তরে কী পরিমাণ গ্যাস মজুত রয়েছে তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরীক্ষা করা হবে। গত ২৯ এপ্রিল জেলার সোনাইমুড়ী উপজলায় অম্বরনগর ইউনিয়নের ওয়াছেকপুর গ্রামে আরেকটি কূপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। নির্দিষ্ট সময়ের আগে বর্তমানে এই কূপের কাজ শেষ করে আগুন দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কূপটির চারটি জোনের প্রতিটি জোনে প্রতিদিন ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করে বাখরাবাদের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করা যাবে বলে আশা করছে বাপেক্স।
প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আল হেলাল প্রিন্স বলেন, ‘২০২২ সালের ২৫ এপ্রিল প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া যায়। ২০২৩ সালে সাড়ে পাঁচ একর ভূমি হুকুম দখল করা হয়। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অবকাঠামো তৈরি এবং ২০২৪ সালের ২ এপ্রিল রিগ নিয়ে এসে ২২ এপ্রিল স্থাপন করা হয়। আমরা চারটি লেয়ারে গ্যাসের সম্ভাব্যতা পেয়েছি। ধারণা করছি, প্রতিদিন ১০ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা যাবে। সব কাজ শেষে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জাতিকে একটা ভালো খবর দিতে পারবে বলে আশা করছি।’