বিডিআরের ডিএডি আব্দুর রহিমের মৃত্যু : শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
ঢাকার পিলখানায় ২০০৯ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) সদস্যদের বিদ্রোহের ঘটনায় করা মামলার আসামি বাহিনীটির উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) মো. আব্দুর রহিমের কারাগারে মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলার আবেদন করা হয়েছে।
আজ রোববার (২৫ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আক্তারুজ্জামানের আদালতে মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে অ্যাডভোকেট আব্দুল আজিজ এই মামলার আবেদন করেন।
বাদীর আইনজীবী মো. দেলোয়ার হোসেন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিচারক বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আবেদনটি নথিভুক্ত করার আদেশ দেন।
আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন আরও বলেন, ‘বিডিআর বিদ্রোহের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ২০১০ সালের ২৯ জুলাই মারা যান। তাকে পরিকল্পিতভাবে আসামিরা হত্যা করেন। এ ঘটনায় তখন চকবাজার থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়। আজ আদালত আমাদের মামলার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চকবাজার থানার সেই অপমৃত্যু মামলার নথি তলব করেন। আজকের আবেদনটি নথিভুক্ত করেছেন।’
মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক বিজিবি মহাপরিচালক ও সাবেক সেনাপ্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজলসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ ছাড়া মামলায় অন্য আসামিরা হলেন—সাবেক কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম খান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, সংসদ সদস্য শেখ সেলিম, নুর আলম চৌধুরী লিটন, শেখ হেলাল, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, হাসানুল হক ইনু ও ২০১০ সালের জুলাইয়ে কেন্দ্রীয় কারাগারের তৎকালীন জেল সুপার ও চিকিৎসক ডা. রফিকুল ইসলাম।
বাদী মামলার আবেদনে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা সরকার ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তর পিলখানায় সুপরিকল্পিতভাবে বিদেশি এজেন্ট নিয়োগ করে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করে। পরে বিডিআর বিদ্রোহের অভিযোগে চকবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
অভিযোগে বাদী আরও বলেন, তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম ডিএডি হিসেবে পিলখানায় কর্মরত ছিলেন। তাকেও বিডিআর বিদ্রোহের মামলায় আসামি করে আটক করা হয়। পরবর্তীতে আসামিরা পরিকল্পিতভাবে কারাগারে তাকে হত্যা করেন।
পিলখানা ট্র্যাজেডির ভয়াবহ নৃশংসতার ১৫ বছর পার হলেও এ ঘটনায় করা দুটি মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। তার মধ্যে হত্যা মামলা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ঝুলে আছে। আর বিস্ফোরক মামলাটি বিচারিক আদালতের গণ্ডিই পার করতে পারেনি।
হত্যা মামলার বিচার সর্বশেষ আপিল বিভাগে শুনানির জন্য অপেক্ষমান রয়েছে। অন্যদিকে, ২০১১ সালে শুরু হওয়া বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার ঢাকার আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।
হত্যা মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২৪-২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআরে বিদ্রোহ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ সময় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়। হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকার বিচারিক আদালত ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিলের রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। আটজনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও চারজনকে খালাস দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয়। হাইকোর্টে বিচার চলার সময় কারাগারে থাকা অবস্থায় দুজনের মৃত্যু হয়। খালাস পান ১২ জন। অপরদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় প্রায় ১৩০০ সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত ২৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।