আহমেদ বাওয়ানী একাডেমির সাবেক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়মের শেষ নেই
রাজধানীর আরমানিটোলার আহমেদ বাওয়ানী একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের পদচ্যুত অধ্যক্ষ মোশারফ হোসেন মুন্সি মুকুলের আর্থিক অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিভিন্ন অনিয়ম অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অনিয়মের অভিযোগ সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক অধ্যক্ষ।
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী আরমানিটোলা মাঠের পাশেই ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করা হয়েছিল। খ্যাতনামা এ প্রতিষ্ঠানটি কালেরগর্ভে হারিয়ে যেতে বসেছিল। গত ৫ আগস্টে শেখ হাসিনার পতনের পর নতুন করে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানটি। হাজী সেলিমের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন মুন্সি মুকুলকে ইতোমধ্যেই অপসারণ করা হয়েছে। নতুন অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ শিক্ষক আহমেদ হোসেন ভূঁইয়াকে। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছেন। ছিলেন কলেজ শাখার প্রধানও।
আহমেদ বাওয়ানী একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকরা জানান, এ প্রতিষ্ঠানটি সাবেক অধ্যক্ষ মোশারফ হোসেন মুন্সি আওয়ামী লীগের দলীয় কোটায় ২০১৫ সালে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের সঙ্গেই বেশি সময় কাটাতেন। একপর্যায়ে শুধু নিজের প্রতিষ্ঠান নয়, এই আসনের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই ভীতির রাজত্ব কায়েম করেছেন তিনি। আহমেদ বাওয়ানী একাডেমিতে তিনি নিয়োগ বাণিজ্য, বই বাণিজ্যসহ অবকাঠামো নির্মাণেও দুর্নীতি করেছেন। অনেক শিক্ষক-কর্মচারীকে করেছেন হয়রানি। নিজের ভাতা মাসে মাসে বাড়ানো এই অধ্যক্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন।
শিক্ষকদের আরও অভিযোগ, গত দুটি জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী সেলিম ও তার ছেলে সোলায়মান সেলিমের নির্বাচনি সমন্বয়ক হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় টাকা লেনদেনের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিষয়টি অধ্যক্ষ নিজেই একাধিকবার গর্বের সঙ্গে বলে বেড়িয়েছেন। আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের এই সভাপতি তার প্রতিষ্ঠান থেকে মূল বেতনের বাইরে বেশ কিছু খাত দেখিয়ে অতিরিক্ত ভাতা নিয়েছেন। নিজের ইচ্ছামতো নিজের ইনক্রিমেন্ট, শিফট ভাতা, দায়িত্ব ভাতা ইত্যাদিসহ অবৈধভাবে পিএফ (প্রভিডেন্ট ফান্ড) নিয়ে প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি নিয়োগ পাওয়া অধ্যক্ষ বেতন-ভাতাসহ যেখানে প্রায় ৪৮ হাজার টাকা পেতেন, চলতি বছরের জুলাইয়ে সেটি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার টাকার বেশি। তিনি কখনো গভর্নিং বডিকে জানিয়ে, কখনো পাশ কাটিয়ে নিজের ইচ্ছামতো বিভিন্ন ভাতা বাড়িয়েছেন। আবার একেক মাসে ভাতার তালিকায় একেক ধরনের তথ্য ব্যবহার করেছেন বলে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের অভিযোগ। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি একই সঙ্গে বাড়িভাড়া বাবদ অর্থ নিয়েছেন, আবার প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ভবনকে নিজের বাসা বানিয়েছেন।
কলেজটির একাধিক শিক্ষক এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন, ‘সাবেক অধ্যক্ষ মোশারফ হোসেন মুন্সি কখনোই আইনের ধার ধারতেন না। তিনি সবকিছুই একক সিদ্ধান্তে করতেন। নিজের বেতনও নিজেই বাড়িয়ে নিতেন।’
অভিযোগের বিষয়ে মোশারফ হোসেন মুন্সি মুকুল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তার কোনো সত্যতা নেই। এগুলো সবই নিয়ম ও বিধি-বিধানের আওতায় করা হয়েছে। কোথাও আইনের ব্যত্যয় ঘটেনি। যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষই স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে সমন্বয় করেই প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন। এখানে আমারও কিছু করার ছিল না। তবে আমার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অনিয়মের অভিযোগ সঠিক নয়।’