সংবিধান বাতিলের দাবি সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণের দাবি জানানোর পর এবার দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদ্যমান সংবিধান বাতিলের দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। আজ শনিবার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া কনভেনশন হলের ঈগল হলে ‘বৈষম্যমুক্ত সশস্ত্র বাহিনী বাংলাদেশ ২.০ বিনির্মাণে প্রয়োজনীয় রূপরেখা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।
হাসনাত বলেন, সংবিধান আমাদের একটা ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা উপহার দিয়েছে। সেই সংবিধান বিদ্যমান রেখে আমরা বিডিআর বিদ্রোহ থেকে শুরু করে ওই সরকারের আমলে যত অপশাসন হয়েছে সেগুলোর বিচার নিশ্চিতের আশা করতে পারি না।
সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আন্দোলনের সময় সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে একটি সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। সেখানে সরকারের বিভিন্ন অন্যায়ের কড়া সমালোচনা করা হয়। আমরা তখন আত্মগোপনে ছিলাম। অনলাইনে সবাইকে একত্রিত করার চেষ্টা করছিলাম। সেসময়ে জেনারেল ইকবাল করিম ভুইয়া ও সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের পদক্ষেপ দেখে আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। একইভাবে ৫ আগস্টের পর জাতীয়ভাবে এ সরকারের প্রতি আস্থা তৈরি করতে সরকারের কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। তার মধ্যে বিচার নিশ্চিত করা অন্যতম।
হাসনাত বলেন, এই সরকার হয়ত ভুলে গেছে তারা বিপ্লবী সরকার। এ সরকার নিজেরাই হয়তো বুঝতে পারছে না তারা একটি বিপ্লবী সরকার। এ সরকারে যারা রয়েছেন তারা কোনো সংবিধান বা নিয়ম মেনে আসেনি। সুতরাং, এই ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থা বিলোপ করার জন্য সংবিধানের দোহাই দিয়ে বা কোনো নিয়মের দোহাই দেওয়া হলে তারা পুরো জাতিকে হতাশ করবে। আমরা আশা করেছিলাম, প্রতিটি পদক্ষেপে মানুষ অনুভব করবে এ সরকার বিপ্লবী সরকার। আজ ৫ অক্টোবর, নতুন বাংলাদেশের দুই মাস হলো। কিন্তু, আজ অবধি আমরা সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যাশিত কোনো পদক্ষেপ দেখিনি, যেটির মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয় এটি বিপ্লবী সরকার।
হাসনাত বলেন, যে সংবিধান আমাদের একটা ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা উপহার দিয়েছে সেই সংবিধান বিদ্যমান রেখে আমরা বিডিআর বিদ্রোহ থেকে শুরু করে ওই সরকারের আমলে যত অপশাসন হয়েছে, সেগুলোর বিচার নিশ্চিতের আশা করতে পারি না। সুতরাং, দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমাদের বিদ্যমান সংবিধান বাতিল করে দিয়ে অবশ্যই আবার সংবিধান পুনর্গঠন করতে হবে।
হাসনাত বলেন, ডিজিএফআই আমাদের যখন ইন্টারোগেশন করত তখন আমাদের রুম আলাদা করে ফেলা হতো। মেন্টালি ম্যানিপুলেট করা হতো। আমাকে এসে বলা হতো সারজিস কিন্তু মেনে নিয়েছে। সে মিটিং করতে যাবে। আন্দোলনের সময়ে আমার বোন গর্ভবতী ছিলেন। তিনি কুমিল্লায় থাকতেন। তারা আমাকে বলত–যেহেতু সারজিস এবং হাসিব মিটিং করতে যাবে, সেহেতু তুমি যদি সেখানে না যাও তাহলে আমরা আমাদের কুমিল্লার যে ফোর্স রয়েছে তাদের দিয়ে তোমার বোনকে উঠিয়ে নিয়ে আসব। ইন্টারোগেশনের সময় যখন নামাজ পড়তে যেতাম তখন আমাদের বলা হতো—আমাদের জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে অথবা ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম এই সমন্বয়ক বলেন, পাসপোর্ট করতে গেলে ডিজিএফআই, স্কুলে ডিজিএফআই, আন্দোলন দমনে ডিজিএফআই, বাজার নিয়ন্ত্রণে ডিজিএফআই! আসলে ডিজিএফআই-এর কাজ কী? ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ায় পুলিশ তাদের পোশাক পরিবর্তনের দাবি করেছে। তারা সংস্কারের এ দাবি করেছে। আমি মনে করি ডিজিএফআইয়ের পক্ষ থেকে বক্তব্য আসা উচিত, যে তাদেরও সংস্কার প্রয়োজন। তা না হলে অতীতে যে ঘটনাগুলো তারা ঘটিয়েছে সেগুলোর দায় তাদের নিতে হবে।
হাসনাত বলেন, আমরা দেখতে পেয়েছি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে ক্ষমা চাওয়ার আগেই মাফ করে দেওয়া হয়েছে। তারা তো ক্ষমা চায়নি। আমরা কি শুনেছি, আওয়ামী লীগ এই পর্যন্ত কোনো বক্তব্য দিয়েছে? এই গণহত্যার জন্য তারা কি মাফ চেয়েছে? তারা মাফ চাওয়ার আড়ে আপনারা কাদের জন্য তাদের মাফ করে দিলেন? তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যতদিন পর্যন্ত মাফ না চায়, বিচার নিশ্চিত করে এবং যতদিন না পর্যন্ত জনতা সিদ্ধান্ত নেয়, ততদিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের পাবলিক অ্যাকসেস আমরা ছাত্রজনতা দেব না। আওয়ামী সরকারের আমলে যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল তারা মূলত ওই ফ্যাসিস্ট সরকারের হয়েই কাজ করেছিল। দ্রুততম সময়ে বিগত এই তিনটি সংসদকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে। যেহেতু তারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে সেহেতু তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দিতে হবে। যারা এই তিনটি সংসদে সদস্য ছিল, তাদের সদস্যপদ অবৈধ করার পাশাপাশি তারা যে সুযোগ সুবিধা নিয়েছে সেগুলো ফেরত দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান নাসির (অব.)। এতে বক্তব্য দেন সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ হাসান, লে. কর্নেল (অব.) হাসিনুর রাহমান বীর প্রতীক, লে. কর্নেল (অব.) শাহির, কমান্ডার মোহাম্মদ শাহরিয়ার আকন (অব.), কমান্ডার নেসার আহমেদ জুলিয়াস (অব.), মেজর আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (অব.), লেফটেন্যান্ট সাইফুল্লাহ খান (অব.), ক্যাপ্টেন হেফাজ উদ্দিন (অব.)।
এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম এবং রাজনীতিবিদ ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অনতিবিলম্বে অপসারণের দাবি জানান হাসনাত আবদুল্লাহ।