দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে জনগণের মালিক নয়, দেশের সেবক হব : জামায়াত আমির
ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে জনগণের মালিক নয়, এ দেশের সেবক হব বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, জনগণের সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য তাঁদের দুয়ারে দুয়ারে যাব এবং কৃতজ্ঞতা আদায় করার সুযোগ নেব। আল্লাহ যদি ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেয় তাহলে মালিক হব না, এ দেশের সেবক হব। যাঁরা অতীতে মালিক হয়েছেন তাঁদের পরিণতি চোখের সামনে আমরা দখতে পেয়েছি। দূর অতীতেও দেখেছি, নিকট অতীতেও দেখেছি। এর থেকে সকলের শিক্ষা নেওয়া উচিত।
আজ শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে নওগাঁ শহরের নওজোয়ান ঈদগাহ মাঠে জামায়াতের রুকন (সদস্য) সম্মেলনে ডা. শফিকুর রহমান এ কথা বলেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নওগাঁ জেলা শাখা এই সম্মেলনের আয়োজন করে।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘মানুষের সঙ্গে গাদ্দারি করলে কি হয়, ধোঁকা দিলে কি হয়, মালিক বনে গেলে কি হয়, জুলুম করলে কি হয়, লুট করলে কি হয়, অপরাধ করলে কি হয়, ব্যাংকিং সেক্টর থেকে অর্থ লুট করলে কি হয়- এর থেকে আমাদের সকলের শিক্ষা নেওয়া উচিত। আমরা সবাই শিক্ষা নেব। তাহলে আগামীতে আমাদের সন্তানেরা যে জন্য জীবন দিয়েছে ও পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, তাঁদের আশা পূরণ হব। এই যাত্রায় আমরা আমাদের সাংবাদিক বন্ধুদের বিশেষ সহযোগিতা চাই। তাঁরা যেন আমাদের সোজা-সাপ্টা কথাগুলো তুলে ধরে।’
ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘একটা কথা স্পষ্ট করতে চাই। যাঁরা একটা জাতিকে বিভিন্ন ধুয়া তুলে টুকরো টুকরো করে তাঁরা কোনো দিন জাতির মঙ্গল চায় না। এই বিভক্তি আর চলতে দেওয়া যায় না। দেশ ও জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে, দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার পক্ষে জামায়াতে ইসলামী। আমরা মানুষকে মানুষের মর্যাদা দিতে চাই। আমরা দল ও ধর্মের ব্যবধান না করে মানুষকে দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
জামায়াতে ইসলামীকে বাংলাদেশের সবচাইতে মজলুম দল উল্লেখ করে দলটির আমির বলেন, ‘সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিল আওয়ামী লীগ। আমাদের কলিজার টুকরা নেতৃত্বকে বিচারের নামে প্রহসন করে তাঁরা হত্যা করেছে। আমাদের শত শত কর্মীকে হত্যা করেছে। অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুম করেছে। ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছে। দেশের সবগুলো জামায়াতের ইসলামীর কার্যালয় সিলগালা করেছে। আমাদের দলের নিবন্ধন অন্যায়ভাবে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এ বছরের পয়লা আগস্ট আমাদের দলকে তারা নিষিদ্ধ করেছে। এই বিবেচনায় বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সবচাইতে মজলুম দল। এর চেয়ে মজলুম দল আর বাংলাদেশে নাই।’
জুলাই আন্দোলনের কৃতিত্ব কারও একার নেওয়ার সুযোগ নেই। এই কৃতিত্ব দেশের ১৮ কোটি মানুষের উল্লেখ করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘সাড়ে ১৫ বছর আগে এই আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। সর্বশেষ জুলাই আন্দোলনে আমাদের সন্তানেরা বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়েছে। রাজপথে আমরা আমাদের সন্তানদের নামাজ আদায় করতে দেখেছি। এই আন্দোলন কোনো নির্দিষ্ট আদর্শের ছিল না। এই আন্দোলন মানুষের মুক্তির সংগ্রামের আন্দোলন ছিল। এই আন্দোলনের মূল কৃতিত্ব আল্লাহর। এই আন্দোলনকে বাস্তবায়ন করেছে আমাদের সন্তানেরা। দেশের ১৮ কোটি মানুষ এই আন্দোলনের সাথে ছিল। নির্দিষ্ট কোনো দলের ভিত্তিতে এই আন্দোলনকে বিভক্ত করতে চাই না। দেশের প্রত্যাশা পূরণ করতে তরুণেরা যেই দেশপ্রেম বুকে নিয়ে শহীদ হয়েছে, পঙ্গুত্ব বরণ করেছে তা পূরণ করার দায়িত্ব নিয়েছে বর্তমান সরকার। আমরা যারা রাজনীতিবিদ রয়েছি তাঁদেরও দায়িত্ব রয়েছে।’
নওগাঁ রুকন সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতে ইসলাম নওগাঁ জেলা শাখার আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য খ ম আব্দুল রাকিব। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দীন এবং রাজশাহী অঞ্চলের সহকারী পরিচালক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।