আশুলিয়ায় শ্রমিক-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ৩ গুলিবিদ্ধসহ আহত ১৫
বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া ও বকেয়া বেতনের দাবিতে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার আন্দোলনের তৃতীয় দিনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন শ্রমিকরা। মহাসড়ক অবরোধ করতে গিয়ে পুলিশের পিটুনিতে আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তিনজন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহতর হলেন সুসুকা গার্মেন্টেসের শ্রমিক হালিমা খাতুন এবং জেনারেশন নেক্সট গার্মেন্টসের শ্রমিক ববিতা আক্তার, মোর্শেদা খাতুন ও চম্পা খাতুন।
আজ বুধবার (২৩ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে আশুলিয়ার নরসিংহপুর-কাশিমপুর সড়কের বাংলাবাজার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, মুর্শেদা রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার তুলারাম মজিদপুর গ্রামের মোজাম্মেল হকের মেয়ে এবং একই উপজেলার আহম্মদপুর গ্রামের চান্দু মিয়ার মেয়ে চম্পা। তার স্বামীর নাম মো. মিঠু। আহতরা বর্তমানে নরসিংহপুরে থাকেন।
শ্রমিকরা জানায়, জেনারেশন নেক্সট পোশাক কারখানার শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন বকেয়া বেতনের দাবিতে তিনদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিমিটেড নামের তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।
প্রথম দুদিন তারা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখলে কার্যত বিপর্যয়ের মুখে পড়ে যান চলাচল ব্যবস্থা।
বুধবার শ্রমিকরা কারখানার সামনে একত্রিত হয়। পরে জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিঃ নামের তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা পার্শ্ববর্তী সিগমা অ্যাপারেলস, ডি-সান, সুসুকা, জি-ম্যাক্স ও শিনশিন পোশাক কারখানায় গিয়ে শ্রমিকদের বের করে তাদের আন্দোলনে একত্রিত করে। এসময় তারা সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাধা দেয়। এতে শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গুলি ছুঁড়লে ৩ শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয় এবং আহত হয় অন্তত আরও ১২ শ্রমিক।
নারী ও শিশু হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক এইচ এম আসাফ উদ্দৌলা রিজভী বলেন, মোট ৪ জনকে আমরা আহত অবস্থায় আমাদের হাসপাতালে পেয়েছি। এর মধ্যে ৩ জন গুলিবিদ্ধ বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। বাকিজনের তলপেটে ইনজুরি রয়েছে। তা গুলির ইনজুরি কি না আমরা নিশ্চিত না।
শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম বলেন, গুলির কোনো ঘটনা ঘটেনি। শ্রমিকরা যখন পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে, তখন সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।
পুলিশ গুলি করেনি দাবি করে সারোয়ার আলম আরও বলেন, যেটা হতে পারে, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হলে এটা যেখানে পড়ে, সেখানে ইটের কণা বা টুকরা থাকলে তা ছিটে গিয়ে স্প্লিন্টারের মতো আঘাত করতে পারে। তেমন হয়তো কারো হাতে বা কোথাও লেগেছে, যেটাকে গুলি বলা হচ্ছে। নিশ্চিতভাবে পুলিশ কোনো গুলি করেনি।
প্রসঙ্গত, জেনারেশন নেক্সট পোশাক কারখানার শ্রমিকরা গত সোমবার সকাল ৯টা থেকে মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৫টা পর্যন্ত নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল মোড় এলাকা অবরোধ করে রাখেন। পরে জলকামানের মুখে সড়ক ছাড়তে বাধ্য হয় তারা। সড়ক ছেড়ে যাওয়ার সময় সড়কে অন্তত অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করে শ্রমিকরা।