স্বৈরশাসনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী সরকারি কর্মকর্তারা : জেলা প্রশাসক
‘স্বৈরশাসনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী সরকারি কর্মকর্তারা। জনগণকে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা সহজ হয়েছে আমাদের মতো সরকারি কর্মকর্তাদের কারণেই।’
আজ মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) ময়মনসিংহ সদর উপজেলায় কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমরা যারা সরকারি কর্মকর্তা আছি. সরকারি কর্মচারী যারা নিজেকে বিবেচনা করি—আমরা সেই সরকারি কর্মচারীরা সব সময় রং পাল্টাতে প্রস্তুত থাকি। আমরা এত বেশি রং পাল্টিয়েছিলাম, এত বেশি চরিত্রকে হারিয়েছিলাম—যার কারণে একটা রাষ্ট্র অকার্যকর করার জন্য আর কিছু বাকি থাকে না।’
জেলা প্রশাসক বলেন, ৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর পুরো বাঙালি জাতি আমরা একটি পরিবারের কাছে জিম্মি হয়ে গেলাম। আমরা দল বলব না, আমরা পুরো জাতি একটি লিমিটেড কোম্পানির কাছে জিম্মি হয়ে গেলাম। এই জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য বাংলার মানুষ অনেক সংগ্রাম করেছে, আন্দোলন করেছে।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ২০১৪ সালে একটা তামাশা হলো, ২০১৮ সালের আরেকটা তামাশা হলো—সর্বশেষ ২৪ সালে নাটক হলো। আমরা ভেবেছিলাম বৈষম্যহীন একটি সমাজ পাব। কিন্তু আসলে কতটুকু বৈষম্যহীন সমাজ আসবে সেজন্য আমাদের কয়েকটা জিনিসের প্রয়োজন আছে। দীর্ঘ ১৫ বছরের যে দুঃশাসন, নির্যাতন, নিপীড়ন—কারা করেছিল? আমরা যারা সরকারি কর্মচারী ছিলাম, জনগণের টাকায় আমরা যারা জীবিকা নির্বাহ করছি। আমাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করিয়েছি। জনগণের টাকা দিয়ে বুলেট কিনে সেই বুলেট জনগণের বুকে মেরেছি। জনগণকে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা সবই সহজ হয়েছে আমাদের মতো সরকারি কর্মকর্তাদের কারণেই। আমরা যারা হোয়াইট কালারের আছি, তাদের জন্য হয়েছে। ছাত্র-জনতা আমাদের সবারই আত্মসমালোচনার একটি সুযোগ করে দিয়েছে। আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে—আমাদের কী করতে হবে সেই পথ দেখিয়ে দিয়েছে।’
সভা শেষে জেলা প্রশাসক অস্বচ্ছল ব্যক্তিদের মধ্যে সমাজসেবার উদ্যোগে নগদ অর্থসহায়তা তুলে দেন উপকারভোগীদের মধ্যে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় সরকারি কর্মকর্তারা ছাড়াও বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকরা।