বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে ভারত : রিজভী
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, মিথ্যার বেড়াজাল নির্মাণ করে বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্তের চেষ্টা করছে ভারত, কিন্তু প্রযুক্তির এই যুগে তারা সফল হতে পারছে না।
আজ শনিবার (৭ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’র উদ্যোগে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের খোঁজখবর নিতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন রিজভী।
‘পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারের জন্য মায়াকান্না করছে ভারত’ মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারের জন্য মায়াকান্না করছেন পার্শ্ববর্তী দেশের রাজনীতিবিদ, নীতিনির্ধারক এবং আরও অনেকেই বিশেষ করে আত্মা বিক্রিকারী মিডিয়ার লোকেরা। বাংলাদেশ নাকি হিন্দুদের বাড়ি পোড়ানো হচ্ছে, বাংলাদেশে নাকি হিন্দুদেরকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে—এই ধরনের ডাহা অসত্য মিথ্যার বেড়াজাল নির্মাণ করে বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রযুক্তির এই যুগে তারা সফল হতে পারছে না, তাই এখন হিংসা-প্রতিহিংসার জ্বালায় প্রতিদিন অপপ্রচারের যে কথাগুলো আমরা জানতে পারছি, তাতে মনে হচ্ছে, ভারতকে আমরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে জানতাম। যে ভারতে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষিত হয় বলে আমরা জানতাম, যে ভারতে অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুষের দেশ, সেই দেশটিকে এখন মনে হচ্ছে সেখানে হিংস্র, ঘাতক ও প্রচন্ড রক্তপিপাসু মানুষেরা সেখানে বাস করে। শেখ হাসিনাকে দিয়ে তারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে। সেই স্বার্থ রক্ষার জন্যই তারা শেখ হাসিনার জন্য যে কুমিরের মায়াকান্না করছেন, এটাই এখন সত্য প্রমাণিত হচ্ছে।’
পার্শ্ববর্তী দেশের কঠোর সমালোচনা করে করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘ওরা (ভারত) এত দূর গেছে, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতার যে পতাকা, সেই পতাকা ছিঁড়ে ফেলেছে, কূটনীতিকদের গায়ে হাত তুলেছে, যা ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী ভয়ঙ্কর রকমের আন্তর্জাতিক গুরুতর অপরাধ, সেই অপরাধ তারা করেছে। তারা একবারও ভাবেনি শেখ হাসিনা এই দেশে কী নিষ্ঠুরতা, কী নির্দয়তা, কী হিংসাশ্রয়ী আচরণ করেছে।’
রিজভী বলেন, ‘আজকে বার্ন ইউনিটে যে দৃশ্য দেখলাম, এই দৃশ্য বর্ণনা করা যায় না, আন্দোলনের সময় আমি কারাগারে ছিলাম, বের হয়ে অনেক হাসপাতালে গিয়েছি, কিন্তু এত বর্বরতা এত মর্মান্তিক বুকফাটা কান্না বেরিয়ে আসে এই দৃশ্য দেখলে, কারও মুখ ঢাকা, মুখ খুললেই মনে হয় এজন্য কোনো হরর ছবির দৃশ্য দেখছি, কে নেবে তাদের দায়িত্ব? কী করে তারা বাঁচবে? এই পরিস্থিতি তৈরি করে গেছেন পলাতক স্বৈরাচার। আর তাদের জন্য এত মায়াকান্না? তার (শেখ হাসিনা) জন্য আজকে সীমান্তে এসে বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে পড়ে, তারা নাকি বিক্ষোভ করবে।’
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ‘শুধু শেখ হাসিনাকে রক্ষা করার জন্য তারা ইসকনের নামে, যে চিন্ময় ইসকন থেকে বিতারিত অপকর্মের কারণে, সরকার তাকে গ্রেপ্তার করেছে, তার জন্য মনে হচ্ছে ভারতের দিল্লি থেকে শুরু করে একেবারে প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত কান্নার রোল পড়ে গেছে। এভাবে চলতে পারে না। বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র, সার্বভৌম রাষ্ট্র। রক্তের দামে কেনা বাংলাদেশ এই বাংলাদেশকে কেউ মাথানত করাতে পারবে না। এই বাংলাদেশকে ভয় দেখিয়ে চোখ রাঙিয়ে নতজানু করানো যাবে না। এই বাংলাদেশে অপরাধীদের বিচার হবে, যারা আমাদের ভাইদেরকে পঙ্গু করেছে, যারা অপরাধ করেছে মন্ত্রী থেকে শুরু করে সব পর্যায়ের অপরাধীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার করতে হবে।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’র আহ্বায়ক সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন, সদস্য সচিব মোকছেদুল মোমিন মিথুন, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’র উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দীন বকুল, বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, যুবদল নেতা মেহবুব মাসুম শান্ত ও ছাত্রদল নেতা ডা. আওয়ালসহ অন্যান্যরা।