হত্যা-চাঁদাবাজির পৃথক মামলায় কামরুল-মেনন-মামুন-মশিউর গ্রেপ্তার
রাজধানীর কয়েকটি থানায় পৃথক চার মামলায় সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক এমপি রাশেদ খান মেনন, সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং পুলিশের সাবেক ডিসি মশিউর রহমানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
আজ সোমবার (৯ ডিসেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সেফাতুল্লাহ এ আদেশ দেন।
এদিন তাদেরকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করে তদন্ত কর্মকর্তারা এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। আবেদন মঞ্জুর করে তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, কামরাঙ্গীরচর থানার চাঁদাবাজির দুই মামলায় সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে আদালত। আজ সকালে সাবেক মন্ত্রী কামরুলকে আদালতে হাজির করার পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কামরাঙ্গীরচর থানার এসআই জাহিদ হাসান তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জাহিদ বলেন, ‘তদন্তে বিভিন্ন তথ্য ও সাক্ষ্যে জানা গেছে কামরুল ইসলামের নির্দেশ ও সহযোগিতায় কামরাঙ্গীরচর থানা এলাকায় বিভিন্ন ব্যক্তির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জমি, দোকান দখল করাসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে জোর করে চাঁদার একটি অংশ ভোগ করতেন। তাই তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো প্রয়োজন।’
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘ভাঙচুরের হাত থেকে বাদী সগির আহমেদ সুজনের বাড়ি বাঁচাতে তার কাছ থেকে ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন মামলার ১ নম্বর আসামি কামরুল ইসলাম। এরপর বাদী মামলার ৩ নম্বর আসামির মাধ্যমে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দেন। তারপর কামরুলের নির্দেশে মামলার অপর আসামিরা গত ২৪ সেপ্টেম্বর বাদীর বাড়িতে ঢুকে জিনিসপত্র ভাঙচুর করাসহ মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।’
এ ঘটনায় সুজন গত ৪ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলার আবেদন করেন সুজন। আদালত মামলাটি কামরাঙ্গীচর থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে কামরাঙ্গীচর থানা গত ৮ সেপ্টেম্বর মামলাটি এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করে। এ মামলার সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে ১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।
এছাড়া, কামরুলের বিরুদ্ধে কামরাঙ্গীরচর থানায় চাঁদাবাজির আরেকটি মামলা করেন আলী আহাম্মদ নামের এক ব্যক্তি। ৪ সেপ্টেম্বর আদালতে এ মামলার আবেদন করেন তিনি। আদালত মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে কামরাঙ্গীরচর থানাকে আদেশ দেন।
পরবর্তীতে কামরাঙ্গীরচর থানা ৭ সেপ্টেম্বর মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করেন। মামলায় সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ছাড়াও ১১ জনের নাম উল্লেখ করে ২৫ জনকে আসামি করা হয়।
এদিকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পথসভায় হামলার ঘটনায় করা মতিঝিল থানার মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এ মামলায় সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান, হাসানুল হক ইনুকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন থাকলেও এদিন তাদের আদালতে উপস্থিত করা হয়নি। তাদের গ্রেপ্তার শুনানি হবে বুধবার।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এসআই শামীম আল মামুন তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। ওই আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে আদালত মেননের গ্রেপ্তার মঞ্জুর করেন। গত ২৬ আগস্ট বিএনপির এক কর্মী বাদী হয়ে এ মামলাটি করেছিলেন।
হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক আইজিপি মামুন ও সাবেক ডিসি মশিউর
সরকার পতনের দিন ১৬ বছর বয়সী রাকিব হাওলাদার হত্যার ঘটনায় চকবাজার থানার মামলায় সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন ও লালবাগ জোনের সাবেক ডিসি মশিউর রহমানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার মডেল থানার পরিদর্শক আবুল খায়ের তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করলে, আদালত এ বিষয়ে শুনানি নিয়ে তা মঞ্জুর করেন। গত ২৩ সেপ্টেম্বর নিহত রাকিবের বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন বাদী হয়ে চকবাজার মডেল থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ৫ অগাস্টে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দীন রোডে মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন রাকিব।
‘মিছিলটি নাজিমউদ্দিন রোড থেকে বের হয়ে চাঁনখারপুল মোড়ে পৌঁছালে ২০০ থেকে ২৫০ জন পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নির্বিচারে গুলি করে। এতে বাদীর ছেলেসহ আসংখ্য আন্দোলনকারী আহত হয়।’
এরপর আহত রাকিবকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নেওয়ার চেষ্টা করা হলে পথে আওয়ামী লীগের কর্মীদের বাধা দেয়। পরে রকিবকে মিডফোর্ট সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।’