আমাদের রান্নাঘরে উঁকি মারবেন না : ডা. শফিকুর রহমান
ভারতকে ইঙ্গিতকে করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, শেখ হাসিনা যে দেশে আশ্রয় নিয়েছেন তারা আমাদের প্রতিবেশি। প্রতিবেশির প্রতি সম্মান রেখে বলতে চাই, আপনারা শান্তিতে থাকুন আমরা চাই। আমাদেরকেও আপনারা শান্তিতে থাকতে দিন। আপনারা রান্নাঘরে কি পাকাবেন আমরা জিজ্ঞেস করি না, আমাদের রান্নাঘরে উঁকি মারার চেষ্টা করবেন না।
আজ শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলটির আমির এসব কথা বলেন। প্রায় ৫৩ বছর পর উন্মুক্ত স্থানে এই প্রথম কর্মী সম্মেলন করে জামায়াতে ইসলামী।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যাদের বয়স আজ ৩০ থেকে ৩২ বছর হয়েছে, গেল তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা ভোট দিতে পারেনি। তাদের ভোটের অধিকার স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ হত্যা করেছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছেড়ে পালানোর আগে ব্যাংক, বীমাসহ আর্থিক খাতগুলো লুটেপুটে গিলে খেয়ে বিদেশে পাচার করেছে।
ওবায়দুল কাদেরের উদ্ধৃতি দিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ৫ আগস্টের পরে কী দুই দিনে বাংলাদেশে পাঁচ লাখ মানুষ হত্যা করা হয়েছিল? কারণ যাদেরকে তারা দোষ দিত তারা এ দেশকে ভালোবাসে। তাদের কোনো দিদির বাড়ি নেই, তাদের কোনো স্বামীর বাড়ি নেই। এই দেশে মহান আল্লাহ্ আমাদের পয়দা করেছেন। গর্বের সাথে এদেশ নিয়ে আমরা বাঁচতে চাই। তারা দায়িত্ব জ্ঞানহীন ও কাণ্ডজ্ঞানহীন হলেও আমরা জাতির দায়িত্ব জ্ঞানসম্পন্ন। যার প্রমাণ দেশের মানুষকে আমরা ভালবাসি।
ভারতকে উদ্দেশ্য করে জামায়াতের আমির আরও বলেন, আমাদেরকে আপনারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলেন, আপনারা নিজের চেহারা তার আগে একটু আয়নাতে দেখুন। আপনারা সেখানে যাদের মাইনোরিটি বলেন, তাদের সাথে আপনারা কী আচরণ করেন? আমাদেরকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ছবক দিতে হবে না। যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এর প্রমাণ দিয়েছে এদেশের রাজনৈতিক দল ও আলেম-ওলামারা।
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার কথা উল্লেখ করে জামায়াতনেতা বলেন, আমরা তাড়াতে পারিনি, ওদেরকে বিদায় করতে পারিনি, আমি গর্বিত আমাদের সন্তানরা সেই কাজটি করতে পেরেছে। ওই সন্তানদের আমি ভালোবাসা উপহার দিচ্ছি। শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি, কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, এরকম সন্তান পেয়ে জাতি গর্বিত। আগামীর বাংলাদেশ তাদের হাতে তুলে দেব।
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, পালায় যারা সন্ত্রাসী ও অপরাধী, যে দেশকে ও জনগণকে ভালবাসে সে কখনও দেশ ছেড়ে পালায় না। চোর-ডাকাতের লিডার শেখ হাসিনার মুখ ভরা বুলি দিয়েছিলেন আমি পালাব না। অবশেষে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। জামায়াতের নেতাদের তড়িঘড়ি করে সাজানো সাক্ষী দিয়ে ঠান্ডা মাথায় রায় দিয়ে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে হত্যা করেছে। কেউ কেউ জেলের ভেতরে মারা গেছে। তারা সাড়ে ১৫ বছর খুনের রাজত্ব কায়েম করেছিল।
জেলা জামায়াতের আমির প্রকৌশলী মো. শাহেদ আলীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মো. ইয়ামীর আলীর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সংগঠনের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মো. ফখরুল ইসলাম ও সিলেট জেলা আমির মাওলানা হাবিুবুর রহমানসহ অন্যান্যরা।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ুন, খেলাফতে মজলিসের কেন্দ্রীয়নেতা অধ্যাপক মাওলানা আব্দুস সবুর, হবিগঞ্জ জেলা আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিশে সুরার সদস্য কাজী মাওলানা মুখলিছুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলার সাবেক আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিশে সুরার সদস্য দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মতলিব, মো. আবদুল মান্নান, মৌলভীবাজার জেলার নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রহমান, ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগর সভাপতি শরিফ মাহমুদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও পল্টন থানা আমির শাহীন আহমদ খান, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আমিনুল ইসলাম, ছাত্রশিবিরের মৌলভীবাজার শহর শাখার সভাপতি তারেক আজিজ, ছাত্রশিবিরের মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি হাফেজ আলম হোসাইন, বড়লেখা উপজেলার সাবেক আমীর মো. কমর উদ্দিন, মৌলভীবাজার পৌর শাখার আমির ও জেলা কর্মপরিষদ সদস্য হাফেজ মাওলানা তাজুল ইসলাম, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য ও মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলা আমির মো. ফখরুল ইসলাম, বড়লেখা উপজেলার আমীর মো. এমদাদুল ইসলাম, রাজনগর উপজেলার আমীর আবুর রাইয়ান শাহীন, কুলাউড়া উপজেলার আমির অধ্যাপক আব্দুল মুনতাজিম, জুড়ী উপজেলার আমির আব্দুল হাই হেলাল, শ্রীমঙ্গল উপজেলার আমির মাওলানা ইসমাঈল হোসেন, কমলগঞ্জ উপজেলা আমির মো. মাসুক মিয়া।
জেলার সাতটি উপজেলা থেকে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা কর্মী সমাবেশে যোগ দেন। কর্মী সমাবেশটি এক পর্যায়ে জনসভায় রূপ নেয়।