মধুমতি মডেল টাউন : বসতভিটা রক্ষা না হলে আত্মাহুতির হুমকি প্লট মালিকদের
নিজেদের বৈষম্যের শিকার দাবি করে বতসভিটা রক্ষার আবেদন জানিয়েছেন রাজধানীর মধুমতি মডেল টাউনের বাসিন্দারা। নিজেদের বসতভিটা রক্ষা করতে না পারলে পরিবার-পরিজন নিয়ে আত্মাহুতিরও হুমকি দিয়েছেন তারা।
আজ বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মধুমতি মডেল টাউন হাউজিং সোইটির সদস্যরা।
লিখিত বক্তেব্যে প্লট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক সুজাউদ্দিন আহম্মদ বলেন, ‘২০০১ সালে সাভারে মেট্রোমেকার্স নামে একটি আবাসন প্রতিষ্ঠান মধুমতি মডেল টাউন নামে একটি প্রকল্প তৈরি করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়। আমরা প্রকল্পের অবস্থান, নথিপত্র যাচাই করে নাল জমি হিসেবে সেখানে প্লট ক্রয় করি। জমির সিএস, আরএস, এসএ খতিয়ানে দেখা গেছে, জমির প্রকৃতি হলো-নাল, জলাশয় নয়। এমনি পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষেরা মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে মধুমতিতে জমি ক্রয় করি। যথারীতি সরকারের সাব রেজিস্ট্রার জমি রেজিস্ট্রি করে দেন। এসিল্যান্ড জমি খারিজ করেন ও ভূমি অফিস ভূমি উন্নয়ন কর গ্রহণ করেন। ডেভেলপার কোম্পানি রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ নির্মাণ করেন ও বৈদ্যুতিক পোল বসায়। পল্লী বিদ্যুৎ-বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করেন। বর্তমানে পল্লী বিদ্যুৎ এ আবাসন থেকে প্রতি মাসে ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল আদায় করেন। এ অবস্থায় হঠাৎ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবীদ সমিতি (বেলা)-এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রকল্পটিকে বন্যা প্রবাহ এলাকা উল্লেখ করে উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেন। আদালত প্রথমে আমাদের পক্ষে রায় দিয়ে মধুমতি মডেল টাউনের মালিক মেট্রোমেকার্সকে রাজউকের অনুমোদন নিতে বলেন।’
সুজাউদ্দিন আহম্মদ বলেন, ‘বেলা আপিল করে প্রভাব খাটিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের আজ্ঞাবহ বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের পক্ষে একটি রায় করান। সেই রায়েও প্লট মালিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, মধুমতি মডেল টাউন প্রকল্প এলাকায় মালিক কর্তৃপক্ষ মেট্রোমেকার্স যদি ছয় মাসের মধ্যে মাটি সরিয়ে না নেয় তাহলে রাজউক মাটি সরিয়ে নেবে। মেট্রোমেকার্স থেকে মাটি সরানোর ব্যয় আদায় করতে বলেছে এবং সেখানে কোনো ধরনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। একই রায়ে প্লট মালিকদের রেজিস্ট্রেশন ব্যয়সহ জমাকৃত অর্থের দ্বিগুণ টাকা পরিশোধের কথা বলা হয়েছে। অথচ একযুগ অতিবাহিত হলেও এ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের একটি টাকাও পরিশোধ না করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উপদেষ্টা হয়ে তার প্রভাব বিস্তার করে রাজউককে দিয়ে আমাদের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা মনে করি, এই রায়ের ক্ষেত্রেও বৈষম্য হয়েছে।’
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘মধুমতি মডেল টাউনের পূর্বপাশে ৫০০ বিঘা জমিতে বিদ্যুতের পাওয়ার প্ল্যান্ট, পশ্চিমে বেসকারি মালিকানাধীন যমুনা ন্যাচারাল পার্ক (প্রায় ৫০ একর), প্রকল্পের সুম্মুখভাগে এক হাজার একর জমিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ময়লার ভাগাড় রয়েছে। সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প তৈরির জন্য একটি চাইনিজ প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া মেট্রোরেলের ডিপো অবস্থিত। এ ছাড়া আরও বেশ কিছু সরকারি বেসরকারি স্থাপনা রয়েছে একই এলাকায়। এ বিষয়ে বেলা বা অন্য কারও কোনো অভিযোগ নেই। শুধু মধুমতি মডেল টাউনের দিকে তাদের যতো আক্রোশ ও প্রতিহিংসা। অথচ এই প্রকল্পের অনুমোদন এর জন্য সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ৯টি ছাড়পত্রের মধ্যে আটটি ছাড়পত্র গ্রহণ করা হয়েছে। ২০ হাজার মানুষের বসবাস এখানে। প্রকল্পে ১০ লাখের বেশি গাছ রয়েছে। একটি গাছ কাটলে বেলা আন্দোলন করে, অথচ এই প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে ১০ লাখের বেশি গাছ কাটা যাবে। এটা পরিবেশের ওপর মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনবে বলে আমরা মনে করি।’
সাংবাদিক সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্লট মালিক সমিতিরি সভাপতি সৈয়দ মোশাররফ হোসেন, সহসভাপতি মো. আব্দুস সাত্তার ও নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুবুল আলমখানসহ অন্যান্যরা।