শতবর্ষের প্রাকপ্রস্তুতিতে ইকেইউ হাই স্কুলে পিঠা উৎসব
পিঠাপুলির উৎসব এখন আর শুধু শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। যে গ্রামে নানা উৎসবে-পার্বণে লেগে থাকে পিঠাপুলির ধুম, তেমনই একটি গ্রামে এবার আয়োজন করা হলো পিঠা উৎসবের। আর সেই পিঠা উৎসবকে ঘিরে তৈরি হলো একটি মিলনমেলা। সেই মিলনমেলাটি আবার একটি বিদ্যালয়ের শতবর্ষকে ঘিরে। যেখানে বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা পিঠার ঘ্রাণে আর প্রাণের টানে ছুটে এসেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পূর্ব কোটালীপাড়া ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয়ের (ইকেইউ হাই স্কুল) শতবর্ষ উদযাপন কমিটির আয়োজনে তেমনই একটি প্রাণবন্ত উৎসবের আয়োজন করা হয়।
কোটালীপাড়ার রামশীল ইউনিয়নের জহরেরকান্দি গ্রামে অবস্থিত ইকেইউ হাই স্কুলের শতবর্ষ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে অংশ নিতে শতবর্ষ উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে সাবেক শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানানো হচ্ছে। শতবর্ষের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানটি হবে আগামী ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি।
শতবর্ষের অনুষ্ঠানের প্রাক-প্রস্তুতি হিসেবে আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে হরেক রকম পিঠা নিয়ে শীতের সকালে এই উৎসবে সবার নজর কাড়ে। শীতে ভাপা পিঠার ভাপ আর কুয়াশার শিশির মিলে যেন উত্তাপ তৈরি করে। আর সেই উত্তাপে শীতের আড়মোড়া ভেঙে যেন সব সতীর্থ এক শামিয়ানার নিচে পিঠার স্বাদ আর অতীত স্মৃতিচারণে মেতে উঠেন। ভাপা, পুলি, পাটিসাপটা, চিতই, দুধ চিতই, ঝিনুক, দুধ পুলি, চন্দ্র পুলি, নারকেল পুলি, খোলা চিতই, তেল পিঠা, নকশী পিঠা, মালাই বিহার, জামাই পিঠা কী ছিল না সেখানে। উৎসবে যেসব পিঠাশিল্পী পিঠা তৈরি করেছেন তাদেরকে আয়োজকদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা উপহার ও পুরস্কার প্রদান করা হয়।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যেমন ছুটে যান প্রাক্তনীরা তেমননি স্থানীয়রা হাজির হন সেই আনন্দে শামিল হতে। উৎসবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মহাপরিচালক (গবেষণা ও পরিসংখ্যান) ও কথাসাহিত্যিক অরুণ কুমার বিশ্বাস, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক প্রবীর কুমার হালদার, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বনোজ কুমার মজুমদার, ঢাকাস্থ ইস্কাটন গার্ডেন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক দুলাল চৌধুরী, ধানমন্ডি বয়েজ হাই স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক সুমন্ত্র কুমার বিশ্বাস, বিএএফ শাহীন কলেজের সিনিয়র শিক্ষক বীরেশ্বর মধু, আগারগাঁও হাই স্কুলের শিক্ষক বিপ্লব বিশ্বাস, শিক্ষক সূর্যকান্ত হালদার, অনুপ হালদার, রামশীল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শ্যামল কান্তি বিশ্বাসসহ স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
এ ব্যাপারে কথাসহিত্যিক অরুণ কুমার বিশ্বাস বলেন, পৌষমাসে আমাদের ঘরে ঘরে হরেকরকম পিঠাপুলির আয়োজন বস্তুত বাঙালির আবহমান লোকজ সংস্কৃতিকে ধারণ ও প্রতিফলিত করে। এর ফলে পাড়া-প্রতিবেশীর মাঝে পারস্পরিক মেলবন্ধন যেমন জোরালো হয়, তেমনি বাঙালির সৃষ্টিমুখর মনন গঠনেও এ জাতীয় আয়োজন ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। মুখরোচক পিঠাপুলির মিষ্টতা জিহ্বা ছাড়িয়ে যায় বাঙালির জাতিসত্ত্বায়। আমরা সতীর্থরা যেমন পিঠার টানেই ছুটে এসেছি আমাদের বিদ্যালয়ে।
প্রধান শিক্ষক বনোজ কুমার মজুমদার বলেন, শখের খাবার পিঠা হলেও বাঙালির জীবন ও সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ শীতের পিঠা। এমন বাঙালি কমই আছে যারা পিঠাপুলি পছন্দ করেন না। বাঙালির এই পিঠার ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতেই আমাদের এই আয়োজন।
উল্লেখ্য, ১৯২৫ সালে রামশীল ইউনিয়নের জহরেরকান্দিতে প্রয়াত বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও সমাজহিতৈষী শশীভূষণ মধু পূর্ব কোটালীপাড়া ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। দেশভাগ তথা বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই বিদ্যালয়ে অনেক গুণী মানুষ লেখাপড়া করেছেন। যারা কোটালীপাড়ার ভৌগোলিক সীমানা পেরিয়ে জাতীয় পরিচয়ে পরিচিতি পেয়ে, অগ্রগণ্য ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন।