১৫ বছরের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সঙ্গে আ.লীগ জড়িত : জ্যোতির্ময় বড়ুয়া
মানবাধিকারকর্মী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেছেন, গত ১০ থেকে ১৫ বছরের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার যত ঘটনা ঘটেছে, তার প্রত্যেকটি ঘটনার সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা ছিল।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সুপ্রিমকোর্ট বার মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এসব কথা বলেন। ডায়াস্পোরা অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি ও বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক ‘সত্য, ন্যায় ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ’ শীর্ষক শিরোনামে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানের ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, আমরা কমবেশি নিজেদের উদ্যোগে বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। দেখেছি কীভাবে স্থানীয়রা রাজনৈতিক শক্তিটাকে প্রয়োগ করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী কীভাবে তাদের তাঁবেদার হিসেবে রাজনৈতিক শক্তির মতো ব্যবহৃত হয়েছে। কীভাবে মানুষজনকে হয়রানি করেছে, নিপীড়ন ও হত্যা করেছে। কখনো কখনো ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে। এগুলোর কোনোটারই কিন্তু বিচার হয়নি।
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আরও বলেন, রামুর ঘটনায় ১৯টি মামলা হয়েছিল। একটি বাদীপক্ষ পরবর্তীতে উত্তোলন করে নিয়েছিল। ১৮টি মামলা এখনো চলমান। ২০১২ সালের ওই ঘটনায় পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার পর আদালত বলেছেন, কিছু হয়নি। অধিকতর তদন্ত লাগবে। পরে বিচারিক তদন্তে ১৯৮ জনের নাম এসেছিল। যার প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে হয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ, না হয় যুবলীগ, না হয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত। বিচারিক তদন্ত প্রতিবেদন কোর্টে দাখিল হলেও প্রকাশ হয়নি। রিট এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। রামুর ঘটনার এখনো বিচার হয়নি। গত ১৫ বছরে এরকম অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছিল।
জুলাই-আগেস্টের বিচার নিয়ে জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ফৌজদারি মামলায় সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়া বিচার করা যায় না। অথচ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এখনো জুলাই-আগেস্টের ঘটনার সাক্ষ্য-প্রমাণ সংরক্ষণে উদ্যোগ নেয়নি।
এসময় ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, আগস্ট মাসের গণহত্যা নিয়ে কথা বলছি। কিন্তু গত ১৫ বছরে গুম-খুনের পাশাপাশি আরও মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। গণগ্রেপ্তার, গণআটক, থানায় এমনকি কারাগারে নির্যাতন হয়েছে। হয়রানি একটা দৈনন্দিন ও স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ট্যাক্স ফাইল নিয়ে টানাটানি করা, সম্পত্তি নিয়ে সমস্যায় ফেলা, চাকরি নিয়ে ঝামেলায় ফেলা এমনকি সামাজিক হয়রানি হয়েছে। বাকস্বাধীনতা নিয়ে আমরা গত পাঁচ মাসে অনেক কথা বলেছি। এখন বলতে পারছি। কিন্তু কীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হলো? সব তো ডিজিএফআই বা এনএসআই দিয়ে করানো হয়নি, অন্যরাও করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আওয়ামী লীগ এখনো স্বীকার করছে না, আওয়ামী লীগের অনেকে এখনো ডিনাইলের মধ্যে আছে। কী পরিমাণ ক্রাইম (অপরাধ) তারা করেছে। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে, বাংলাদেশের সোসাইটি ও তরুণ প্রজন্ম একটা রিকন্সিলিয়েশনের জায়গায় যাবে। আওয়ামী লীগ বলছে হাজার হাজার পুলিশ মারা গেছে। আমরা ৪৪ জনের নাম দিয়ে দিয়েছি। এর বেশি কেউ পেলে আমাদের দেখান। আওয়ামী লীগ তো তার ন্যারেটিভ দিচ্ছে। তারা মনে করছে এই সরকার অজনপ্রিয় হয়ে গেলে তার ন্যারেটিভ ইম্পোজ করবে।
শফিকুল আলম আরও বলেন, এবারের যে আন্দোলন, বাংলাদেশের সোসাইটির যে ম্যাচুরিটি এটা অবিশ্বাস্য। ৫ আগস্টের পরে সাত-আটদিন পুলিশ ছিল না। এই সোসাইটির তো প্রতিটি ঘরে হানাহানি হওয়ার কথা ছিল। ১৫ থেকে ২০ হাজার লোককে যদি মেরে ফেলা হতো তাহলে আমাদের সোসাইটি, জাতি ড্যামেজ হয়ে যেতো। গণঅভ্যুত্থানে আমাদের অনেক ম্যাচিউরিটি এসেছে। আমাদের সংবাদপত্র উন্নত হয়েছে। আমাদের সত্য অন্বেষণের জন্য জায়গাটা উন্নত হয়েছে।