রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা
রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাহিন সরকার ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহসমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন শিক্ষার্থীরা।
আজ শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে সংবাদ সম্মেলন করে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এই অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী জেলা ও মহানগর শাখা কমিটিতে বিতর্কিতদের রাখার অভিযোগ তুলে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী জুবায়ের রশীদ বলেন, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে রাজশাহীর দুই বীর সন্তান আলী রায়হান ও সাকিব আনজুম নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী মহল সেই বিপ্লবের প্রকৃত নায়কদের মাইনাস করে, ৫ আগস্টের পর সুবিধাভোগী কিছু অনুপ্রবেশকারীর মাধ্যমে প্রহসনের পকেট কমিটি গঠন করেছে। তিনি আরও বলেন, ৩০ জানুয়ারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী জেলা এবং মহানগরীর ঘোষিত কমিটিতে প্রকৃত আন্দোলনের সাহসী, বিপ্লবী এবং নির্ভরযোগ্য নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে আন্দোলনের চেতনাবিরোধী, বহিরাগত ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। আন্দোলনবিরোধী এসব ব্যক্তি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাজারে চাঁদাবাজি, ক্ষমতা দখল এবং সুবিধা নেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত।
জুবায়ের রশীদ অভিযোগ করেন, ফাতিন মাহাদী ও মাহিন সরকার মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এ কমিটি গঠন করেছেন। এ কমিটির নেতৃত্বে এমন অনেককে রাখা হয়েছে, যারা সরাসরি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এমনকি আওয়ামী লীগের শরিক দল জাসদের ছাত্র সংগঠনের মূল নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিকেও গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। আন্দোলনের সময় রাজশাহীর বাইরে ছিল, আন্দোলনে সম্পৃক্তই ছিল না, তাদেরও কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে।
ঘোষিত কমিটিকে পকেট কমিটি দাবি করে তা বাতিলের দাবি জানিয়ে জুবায়ের বলেন, হত্যা মামলার অন্যতম আসামিকেও এ কমিটির শীর্ষ পদে রাখা হয়েছে। এরা আন্দোলনের চেতনা বিকৃত করে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগত স্বার্থসিদ্ধির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার ও তাঁর সহযোগী কিছু ভুয়া সমন্বয়কের নেতৃত্বে প্রকাশিত কমিটি ঘোষণার সঙ্গে তাদের প্রত্যক্ষ যোগসাজশ রয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমিটি বাতিল করতে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আরিফ সোহেল, আব্দুল হান্নান মাসুদ, হাসনাত আব্দুল্লাহ, উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
রাজশাহীর সর্বস্তরের ছাত্রসমাজ এ পকেট কমিটিকে সম্পূর্ণভাবে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন থেকে রাজশাহীর মাটিতে মাহিন সরকার ও সালাউদ্দিন আম্মারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী কলেজের আব্দুর রহিম, আব্দুল হাফিজ সরকার, এনামুল হক আদিব, ইয়াসিন আরাফাত, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শাফিউল ইসলাম অনিক, রাজশাহী মেট্রোপলিটন কলেজের নুরজাহান, রাজশাহী সিটি কলেজের আবু শাকিল আকাশসহ জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান ছাত্র আন্দোলনে রাজশাহীতে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আনা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, কমিটি করার ব্যাপারে আমাদের কোনো হাত নেই। এটা কেন্দ্র যাচাই-বাছাই করে করেছে। আন্দোলনের মাঠে যারা ত্যাগী, তাদের রাখা হয়েছে। অবাঞ্ছিত কতবারই তো করা হয়েছে। আজকে যারা সংবাদ সম্মেলন করেছে, তারা বেশিরভাগই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সুতরাং এটা কেন করা হলো সেটি নিয়ে কারও সংশয় থাকার কথা না।