তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা, ঢাবি প্রশাসনের পক্ষ থেকে নারাজি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে তোফাজ্জল হোসেন নামের মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নারাজি দাখিল করা হয়েছে।
আজ রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইফুজ্জামানের আদালতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে অ্যাডভোকেট সেলিম জাবেদ এ নারাজি দাখিল করেন।
এর আগে গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৮টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এরপরে ১৯ সেপ্টেম্বর শাহবাগ থানায় মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমানুল্লাহ। পরে ৩০ ডিসেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান। অভিযোগপত্রে প্রতিষ্ঠানের ২১ শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রের আসামিরা হলেন—ফজলুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জালাল মিয়া, মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন মিয়া, পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মো. মোত্তাকিন সাকিন, ভূগোল বিভাগের আল হোসেন সাজ্জাদ, ওই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আহসান উল্লাহ, ওয়াজিবুল আলম, ফিরোজ কবির, আব্দুস সামাদ, শাকিব রায়হান, ইয়াসিন আলী, ইয়ামুজ্জামান ইয়াম, ফজলে রাব্বি, শাহরিয়ার কবির শোভন, মেহেদী হাসান ইমরান, রাতুল হাসান, সুলতান মিয়া, নাসির উদ্দিন, মোবাশ্বের বিল্লাহ, শিশির আহমেদ, মহসিন উদ্দিন ও আব্দুল্লাহহিল ক্বাফি। এদের মধ্যে প্রথম ছয়জন আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।
এজাহারে বাদী বলেন, গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৮টার সময় একজন যুবক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের গেটে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র তাকে আটক করে প্রথমে ফজলুল হক মুসলিম হলের মূল ভবনের গেস্ট রুমে নিয়ে যান। মোবাইল চুরির অভিযোগ করে তারা ওই যুবককে এলোপাতাড়ি চর-থাপ্পড় ও কিল-ঘুষি মারেন। জিজ্ঞাসাবাদে ওই যুবক তার নাম তোফাজ্জল বলে জানান। পরে তিনি মানসিক রোগী বুঝতে পেরে তাকে হলের ক্যান্টিনে নিয়ে খাবার খাওয়ান। এরপর তাকে হলের দক্ষিণ ভবনের গেস্ট রুমে নিয়ে জানালার সঙ্গে হাত বেঁধে স্ট্যাম্প, হকিস্টিক ও লাঠি দিয়ে উচ্ছৃঙ্খল কিছু ছাত্র বেধড়ক মারধর করে। পরে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর মারা যান তোফাজ্জল।
তোফাজ্জলের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলী ইউনিয়নে। এর পরে ২৫ সেপ্টেম্বর ফজলুল হক মুসলিম হলে প্রভোস্ট অধ্যাপক শাহ মুহাম্মদ মাসুমসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে নিহতের ফুফাতো বোন মোসা. আসমা আক্তার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আক্তারুজ্জামানের আদালতে মামলার আবেদন করেন।
আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যায় কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলার সঙ্গে এ মামলা একইসঙ্গে তদন্তের নির্দেশ দেন।
এ মামলায় শাহ মুহাম্মদ মাসুম বাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জালাল মিয়া, সুমন মিয়া, ফিরোজ কবির, আবদুস সামাদ, মোত্তাকিন সাকিন শাহ, আল হোসাইন সাজ্জাদ, ওয়াজিবুল আলম, আহসান উল্লাহ, ফজলে রাব্বি, ইয়ামুস জামান, রাশেদ কামাল অনিক, শাহরিয়ার কবির শোভন, মেহেদী হাসান ইমরান ও মো. সুলতানকে আসামি করা হয়।