আমাদের লক্ষ্য আহতদের সুস্থ করে তোলা: স্বাস্থ্য উপদেষ্টা
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেছেন, আমাদের লক্ষ্য বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের সুস্থ করে তোলা।
আজ রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
নূরজাহান বেগম বলেন, আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের সময়ই প্রধান উপদেষ্টা আমাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন- আন্দোলনে আহতদের ব্যাপারে সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দেওয়া। সেটা আমরা পালন করার চেষ্টা করেছি এবং করে যাচ্ছি। পাঁচটা দেশ থেকে চিকিৎসকরা এসেছেন আহতদের চিকিৎসা দিতে। আমাদের চেষ্টা ছিল যারা হাত, পা, চোখ হারিয়েছে তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দেওয়া।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, আমরা কখনই আহতদের চিকিৎসার ব্যাপারে কার্পণ্য করিনি। আহত ৩০ জনকে ইতোমধ্যেই চিকিৎসার জন্য ব্যাংকক এবং সিঙ্গাপুরে পাঠিয়েছে সরকার। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। কখনও অর্থের কথা চিন্তা করিনি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে যেভাবে হোক আমাদের সন্তানগুলোকে সুস্থ করে তোলা।
সংবাদ সম্মেলনে সিঙ্গপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডোনাল্ড ইউ বলেন, আমরা ২৭৮ জনের মত আহত রোগী দেখেছি এবং বলতে হচ্ছে এটা আমার চিকিৎসা জীবনে অন্যরকম একটি অভিজ্ঞতা। এত বেশি চোখের ইনজুরি আমরা আমাদের চিকিৎসা জীবনেও কোনোদিন দেখিনি।
ডোনাল্ড ইউ আরও বলেন, আহত রোগীদের ক্রিটিক্যাল ফেইজে বাংলাদেশের চিকিৎসকরা যে চিকিৎসা দিয়েছে সেটাকে আমি মিরাকল বলবো। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যারা চোখে আঘাত পেয়েছেন তারা সাহায্যের বাইরে। আমরা সাত-আটজন রোগীকে শনাক্ত করেছি, তাদের চিকিৎসা সিঙ্গাপুরে হলে তাদের চোখের অবস্থার আরও উন্নতি করা সম্ভব।
মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক বলেন, আহত কিছু কিছু ব্যক্তি আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছে যেটা আমার জন্য সত্যিই হৃদয়বিদারক। আমি বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করবো যাতে তাদের পর্যাপ্ত সাইকোলজিক্যাল চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে অনেকেরই এ বাস্তবতাটা মেনে নিতে হবে যে, কেউ কেউ এক বা দুই চোখ সম্পূর্ণভাবে হারিয়েছেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, আহতদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যাপারে আমাদের পক্ষ থেকে আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। আহত যোদ্ধাদের কষ্টের কথা যেভাবে সিঙ্গাপুরের ডাক্তার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডাক্তার অনুভব করেছেন, আমরা স্বাধীন ও মুক্ত দেশের নাগরিক হিসেবে আহত যোদ্ধাদের প্রতি আরও অনেক বেশি ঋণী, অনেক বেশি কৃতজ্ঞ।
ডা. সায়েদুর বলেন, আহতদের যথাযথ চিকিৎসা করাটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব মনে করে আমরা যথাসাধ্য সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। এছাড়া আহত যোদ্ধাদের যে সকল বিষয় নিয়ে মনোবেদনা এবং ক্ষোভ তৈরি হয়েছে সেই বিষয়গুলোতে আমরা মনোযোগ দিয়েছি এবং দিচ্ছি।
আহতদের ফিজিওথেরাপির ব্যাপারে সায়েদুর রহমান আরও বলেন, আমরা আহত যোদ্ধাদের ফিজিওথেরাপির ক্যাপাসিটি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছি। আমরা চীন থেকে রোবোটিক ফিজিওথেরাপির যন্ত্রপাতি আনছি। তবে আশা করছি সেটা বেশি মানুষের প্রয়োজন হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে আহতদের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত চিকিৎসরা উপস্থিত ছিলেন।