গণমাধ্যমের ওপর আস্থা হারায়নি মানুষ : জরিপ
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গণমাধ্যম বিষয়ে জাতীয় জনমত জরিপে বলছে, সামগ্রিকভাবে গণমাধ্যমের ওপর আস্থা হারায়নি মানুষ। আজ বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ সায়েম হোসেনের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ জরিপ প্রকাশ করা হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারে গঠিত গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের জন্য জরিপটি করেছে বিবিএস। গণমাধ্যমের ব্যবহার নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপকভিত্তিক এ ধরনের জরিপ দেশে এটিই প্রথম।
জরিপে বলা হয়, জুলাই আন্দোলনে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে পাঠক, দর্শক ও শ্রোতাদের মনোভাব জানার জন্য পরিচালিত এক জরিপে বিভিন্ন চিত্র উঠে এসেছে।
এতে বলা হয়, খবরের বাহন হিসেবে প্রচলিত গণমাধ্যমের চেয়ে মোবাইল সেটের ওপর মানুষের নির্ভরতা বেশি। সামগ্রিকভাবে গণমাধ্যমের ওপর মানুষ আস্থা হারায়নি। তবে রাজনৈতিক, সরকারি ও প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপকে বস্তুনিষ্ঠ খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় হিসাবে দেখা হচ্ছে।
জরিপে বলা হয়, মানুষ মুদ্রিত খবরের কাগজ কম পড়লেও অনলাইন সংস্করণ পড়ছেন মোবাইলে। জাতীয় দুর্যোগ বা সংকটে তথ্য খোঁজার জন্য এখনো মানুষ চোখ রাখেন টেলিভিশনের পর্দায়। তবে, তথ্য সংগ্রহের মাধ্যম হিসাবে রেডিওর প্রাসঙ্গিকতা তলানিতে। জরিপে গণমাধ্যমকে স্বাধীন, পক্ষপাতহীন, সরকারি ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত দেখার আকাঙ্খা ব্যক্ত করা হয়েছে। তবে, বেশির ভাগ উত্তরদাতাই মনে করেন, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত।
গণমাধ্যমবিষয়ক জাতীয় এ জনমত জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৭৩ শতাংশ জানিয়েছেন তারা মুদ্রিত সংবাদপত্র পড়েন না। কারণ, হিসেবে ৪৬ ভাগ অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন, খবরের কাগজ পড়ার প্রয়োজন মনে করেন না তারা। টেলিভিশনের ক্ষেত্রে এ হার ৫৩ শতাংশের বেশি। তবে, জরিপে অংশ নেওয়া ৬৫ ভাগ মানুষ জানিয়েছেন তারা টেলিভিশন দেখেন।
জরিপে বলা হয়, ‘পরিসংখ্যানে রেডিওর অবস্থা বেশি নাজুক। ৯৪ শতাংশ জানিয়েছেন তারা রেডিও শোনেন না। তাদের ৫৪ শতাংশ বলেছেন, তারা রেডিও শোনার প্রয়োজন মনে করেন না। প্রায় ৩৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী রেডিও সেটের অপ্রাপ্যতার কথা উল্লেখ করেছেন।’
এ বছর পয়লা জানুয়ারি থেকে সাত জানুয়ারি দেশের ৬৪ জেলায় ৪৫ হাজার খানা (হাউজহোল্ড) থেকে ১০ বছরের বেশি বয়সের সদস্য থেকে উত্তর সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে গণমাধ্যমের বিস্তার, মানুষের সংবাদ গ্রহণের অভ্যাসের পরিবর্তন, গণমাধ্যমের ওপর মানুষের আস্থা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয় প্রতিফলিত হয়েছে। এতে দেখা গেছে মুদ্রিত খবরের কাগজ না পড়লেও ৫৯ শতাংশ উত্তরদাতা মোবাইল ফোনে অনলাইন সংস্করণ দেখেন। কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা ট্যাব-এ পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ দেখেন বলে জানিয়েছেন আড়াই শতাংশ উত্তরদাতা। সামগ্রিকভাবে ৮৮ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, তারা গণমাধ্যমের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহারের হার ৭ শতাংশ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে খবরের জন্য ৩১ শতাংশ উত্তরদাতার আস্থা রয়েছে ফেসবুকে। এরপর ইউটিউবে, ১৬ দশমিক পাঁচ শতাংশ। কোনো কিছু শিখা বা জ্ঞানার্জনের জন্য প্রচলিত গণমাধ্যমের চেয়ে শিক্ষকের ওপরই ভরসা বেশি। এক্ষেত্রে ৪২ শতাংশ উত্তরদাতার কাছে শিক্ষকরাই সর্বাধিক বিশ্বাসযোগ্য।