গোবিন্দগঞ্জে আলু বিক্রি করে উৎপাদন খরচও উঠছে না কৃষকের
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/12/gaaibaandhaa_aalu_0.jpg)
দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে গাইবান্ধা জেলায় অনেক বেশি আলু উৎপাদন হয়। জেলার উপজেলাগুলোর মধ্যে আলু উৎপাদনে গোবিন্দগঞ্জ অন্যতম। এই উপজেলার কৃষকরা গত বছর অনেক বেশি আলুর দাম পেলেও এবার পড়েছে সংকটে। বাজারে আলুর দাম এতটাই কম যে উৎপাদনের খরচও উঠছে না। অন্য দিকে হিমাগারে সংরক্ষণের সুযোগ থাকলেও হঠাৎ ব্যয় বৃদ্ধির ঘোষণায় সে পথও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে৷
এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জের ক্ষুব্ধ কৃষক আব্দুল মতিন বলেন, সিন্ডিকেট করে তাদের গলায় এই ফাঁস পরানো হচ্ছে। কারণ এখন প্রতি কেজি আলুতে তাদের লোকসান হচ্ছে পাঁচ টাকার কাছাকাছি। সেখানে অতিরিক্ত মূল্যে সেই আলু হিমাগারে রাখলে তাদের সর্বনাশ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আর এতে করে এই মৌসুমে শুধু গাইবান্ধা জেলায় হিমাগার কর্তৃপক্ষের কাছে বাড়তি দিতে হবে ১৫০ কোটি টাকা।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মেহেদি হাসান বলেন, এবার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ৬১০৪ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে আলু চাষ হয়েছে ৯৩১৮ হেক্টর জমিতে। এ থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রতি হেক্টরে ২০ থেকে ২২ মেট্রিক টন। ভালো ফলন হওয়ায় এখানে লক্ষ্যমাত্রার বেশি আলু মিলবে। তবে আশানুরূপ ফলন হলেও বাজারমূল্য কম থাকায় কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
গোবিন্দগঞ্জের কৃষকরা বলছেন, এবার প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ হয়েছে ১৪ থেকে ১৬ টাকা। জমি চাষ, বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ ও শ্রমখরচ মিলিয়ে এক বিঘা জমিতে আলু চাষ করতে তাদের ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু ক্ষেত থেকে এখন আলু বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০ থেকে ১২ টাকা কেজিতে। যা উৎপাদন খরচের থেকেও কম। স্বাভাবিক কারণেই মৌসুমের শুরুতেই প্রত্যেক কৃষককে ব্যাপক লোকশান গুনতে হচ্ছে।
হিমাগার মালিকরা জানান, গাইবান্ধা জেলায় মোট পাঁচটি হিমাগার রয়েছে। আর এগুলোর মোট ধারণক্ষমতা প্রায় ৪৫ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন। ২০ ফেব্রুয়ারির পর থেকে আলু সংরক্ষণ শুরু হবে৷ মৌসুমের ১০ থেকে ১২ দিনেই একটি হিমাগার আলুতে ভরে যায়। কোনো কোনো হিমাগার থেকে আলু বের হতে ছয় থেকে আট মাসও লেগে যায়। তাই এবার হিমাগারের ভাড়া নির্ধারণ করা হবে আলু বের করার সময়। গত বছরও আলু রাখার সময় ভাড়া নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত প্রামাণিক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, হিমাগারের বিপরীতে নেওয়া ঋণের সুদ, বিদ্যুৎ খরচ, লোড আনলোডিং ও পাল্টানোর খরচ, কর্মচারীদের বেতন, বোনাস, বিমা খরচ, গ্যাস বিল, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ বিশ্লেষণ করে প্রতি কেজি আলুর সংরক্ষণ ব্যায় দাঁড়ায় ৯ টাকা ৬২ পয়সা। তারপরও ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজিতে ৮ টাকা।
একইসঙ্গে হিমাগার অ্যাসোসিয়েশন বলছে, গত বছর ব্যাংক সুদের হার ছিল ৯ থেকে ১০ শতাংশ। এ বছর তা বেড়ে ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ হয়েছে। যদিও বিদ্যুতের বিল আপরিবর্তিত হয়েছে। আগে ৭০ থেকে ৮০ কেজির প্রতি বস্তার আলুর ভাড়া ছিল ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা। আর এবার প্রতি বস্তায় ৫০ কেজির বেশি আলু রাখা যাবে না। ভাড়া পড়বে ৮ টাকা হিসাবে ৪০০ টাকা।