সরি আপা, ইট ইজ ওভার : শেখ হাসিনার উদ্দেশে প্রেস সচিব

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফিরে আসার সামান্য সম্ভাবনা এখন শেষ। তিনি শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বলেন—‘সরি আপা, ইট ইজ ওভার।’
আজ রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) শফিকুল আলম এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, অবশেষে জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ওপর চূড়ান্ত আঘাত হেনেছে। তার রাজনীতিতে ফেরার সামান্য সম্ভাবনাও এখন শেষ। যদি আওয়ামী লীগ এবং তাদের সেই বিশাল কর্মীবাহিনী, যারা জুলাই-আগস্টের হত্যাযজ্ঞে জড়িত ছিল না, দলকে পুনর্জীবিত করতে চায়, তবে একমাত্র উপায় হলো—শেখ হাসিনা ও তার পরিবারকে প্রত্যাখ্যান করা এবং জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অন্য কোনো ব্যাখ্যার সুযোগ দেয়নি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, আগস্টের শেষের দিকে জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থাকে তদন্ত করতে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আমার মনে পড়ে সেসময় অনেকেই এর বিরোধিতা করেছিলেন। কেউ কেউ আমাদের বাংলা প্রবাদ স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন—খাল কেটে কুমির আনা হচ্ছে। কেউ কেউ বলেছেন—জাতিসংঘকে অযথাই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে টেনে আনা হচ্ছে। তারা যে সকল প্রতিবেদন প্রকাশ করবে তার মাধ্যমে এমনটি হবে যা আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে দেখা যায়। তবে মুহাম্মদ ইউনূস তার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। তিনি হত্যাকাণ্ডের স্বাভাবিক প্রমাণ চেয়েছিলেন। তিনি জানতেন এ বিষয়টি প্রমাণ করার জন্য জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনই নেতৃত্ব দিতে পারবে।
গত বছরের জুলাই এবং আগস্টে মাসে বাংলাদেশে কী ঘটেছিল তা সবাই জানে। কার হুকুমে হত্যাকাণ্ড হয়েছে। পুলিশের ভূমিকা কী ছিল, নিরাপত্তা বাহিনী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের ভূমিকা সম্পর্কেও জানে সবাই। কিন্তু আমাদের গল্প বলা যতই শক্তিশালী হোক না কেন, সত্য খুঁজে বের করার জন্য আমাদের কিছু সুপরিচিত এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য সংস্থার প্রয়োজন ছিল। আর যদি সত্য অপ্রীতিকর বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে তাই হোক!
সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদের সুপ্রসন্ন ভাগ্যের বিষয়টি উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের ভাগ্য অত ভালো নয়। কেননা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো হাসিনার বেশিরভাগ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা কার্যকরভাবে নথিভুক্ত করেছে। এছাড়া তার ভোট কারচুপিও ছিল স্পষ্ট এবং নির্লজ্জ। জোরপূর্বক গুম, গণহত্যা এবং গণহারে কারাদণ্ড দেওয়া বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তবুও সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানের কারণে তার ‘শক্তিশালী অবস্থানের’ জন্য কিছুটা সুবিধা পেয়েছিলেন।
হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে যতবারই প্রতিবাদ করা হয়েছিল, পশ্চিমারা অনিচ্ছাকৃতভাবে তাকে সমর্থন করেছিল—কারণ, তিনি সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানে ছিলেন। এ ছাড়া তার ক্ষমতাচ্যুতির পরেও, পুরো আওয়ামী লীগ এবং ভারতীয় মিডিয়া জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানকে একটি ইসলামপন্থিদের আন্দোলন বলে প্রমাণ করার জন্য বদ্ধপরিকর ছিল। তবে জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধানের প্রতিবেদনগুলো হাসিনার যা কিছু করার ছিল তা ধ্বংস করে দিয়েছে। সবশেষে শফিকুল আলম বলেন—দুঃখিত, আপা!! ইট ইস ওভার!!