জবির ভর্তিযুদ্ধে ৪৫ বছর বয়সী অদম্য তকু

জীবন যে একটি ফুলশয্য নয়, তা হাঁড়ে হাঁড়ে উপলব্ধি করতে পেরেছেন। তাই ৪৫ বছর বয়সে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নে বিভোর। মানসিক অসুস্থতার কারণে দীর্ঘসময় পড়াশোনার বাইরে ছিলেন তিনি। তবে অদম্য ইচ্ছেশক্তি তাঁকে হার মানাতে পারেনি। এই অদম্য মানসিক ইচ্ছেশক্তির মানুষটি হলেন নওগাঁর তৌহিদুর রহমান তকু।
অসুস্থতা ও নানা প্রতিকূলতাকে হার মানিয়ে গত শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের কলা ও আইন অনুষদের (বি ইউনিটের) প্রথম পালায় (সকাল ১০টা থেকে ১১টা) ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন তকু। জবির শহীদ সাজিদ একাডেমিক ভবনের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ৪১৮ নম্বর কক্ষে তাঁর আসন পড়েছিল।
তৌহিদুর রহমান তকুর বাড়ি শহরের পার নওগাঁ এলাকায় ছোট যমুনা নদীর তীরে। বাবা মৃত বজলুর রশিদ। তিন পেশায় ছিলেন একজন স্টেশন মাস্টার।
রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্রে দেখা যায়, তৌহিদুর রহমান তকু নওগাঁর এনায়েতপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২০২২ সালে দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৬৩ পেয়েছেন এবং ২০২৪ সালে গয়ড়া তেঁতুলিয়া ডিএম ফাজিল মাদ্রাসা থেকে জিপিএ ৪.৬৪ পেয়ে আলিম পাস করেন।
তৌহিদুর রহমান তকুর দাখিল ও আলিম পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ডে দেখা যায় তাঁর জন্ম ৩০ ডিসেম্বর ২০০৫। কিন্তু তাঁর আসল জন্ম তারিখ ১৯৭৯ সালের ২৬ জুলাই বলে জানান তিনি।
তকু ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানান, কিশোর বয়সে নিম্নমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার আগেই মস্তিষ্কের জটিল রোগে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন তিনি। ২৬-২৭ বছর অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করেছেন। তার স্ত্রীও তাকে ছেড়ে গেছেন। স্ত্রী চলে যাওয়ার পর মা ও বড় বোনই দেখাশোনা করেন তাঁর।
তকুর মায়ের নাম মোছা. তাজকেরাতুন নেছা। তাঁর বয়স ৭৫।
সুস্থ হওয়ার পর নওগাঁ সরকারি কে ডি স্কুলে ভর্তি হন তকু। এরপর তিনি ২০১৯ সালে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জেডিসি, ২০২১ সালে দাখিল এবং ২০২৪ সালে আলিম পাস করেন। সুস্থ হওয়ার পর তার আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। এরপর চলতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেন।
স্থানীয়রা জানায়, টিউশনি করে তকু সময় পার করেন। পরিবারের সদস্য হিসেবে একমাত্র মা আছেন। বিয়ে করেছিলেন পরে তালাক হয়ে যায়। সন্তান নেই। নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের টিউশনি করান। তাদের সঙ্গে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।

নিজের স্বপ্নের কথা জানিয়ে তকু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে ভালো ফল করতে চাই। আমি একজন শিক্ষক হতে চাই। আমি গরিব শিক্ষার্থীদের সাহায্য করতে চাই। তাদের স্বল্প খরচে পড়াতে চাই। দেশের পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা যেন কম খরচে ভালো শিক্ষার মান পায়, সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।
তকু বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি ভর্তির সুযোগ না-ও পাই, আবার চেষ্টা করব। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেব।
যোগ্যতা অনুসারে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিপরীক্ষা দেবেন তিনি। সুযোগ পেলে বাংলা অথবা ইংরেজিতে পড়তে চান তিনি।