‘নিজেদের ইতিহাস সঠিকভাবে না জানলে জাতি উন্নতির পথে এগোতে পারে না’

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেছেন, ইতিহাসের সঠিক মূল্যায়ন করা খুবই জরুরি। একটি জাতি যদি নিজেদের ইতিহাস সঠিকভাবে না জানে, তবে তারা সত্যিকার অর্থে উন্নতির পথে এগোতে পারে না।
গতকাল শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গবীর ওসমানী স্মৃতি পরিষদ আয়োজিত মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর জেনারেল এম.এ.জি ওসমানীর ৪১ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে জেনারেল ওসমানীর রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত এবং তার সম্মানে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
আলোচনা সভায় উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, জেনারেল ওসমানীকে তার যথাযথ সম্মান প্রদান করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তার অবদান তুলে ধরা আমাদের দায়িত্ব। তিনি বলেন, বঙ্গবীর জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী ছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তার দৃঢ়তা, কঠোর নিয়মানুবর্তিতা, গণতন্ত্রের প্রতি অবিচল, নিপুণ সমর কুশীলতার মাধ্যমে তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সামরিক নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
উপদেষ্টা আরও বলেন, ওসমানী ছিলেন সকল মুক্তিযোদ্ধার আস্থার প্রতীক। যার রণকৌশল, পরিকল্পনা বাংলাদেশের বিজয়ের পথকে সুগম করেছিল।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, প্রতিটি মানুষ একটি অভীষ্ট লক্ষ্য নিয়ে জন্মায়। ১৯৭১-এ আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পেরেছিলাম, আমরা এ কারণে সৌভাগ্যবান যে, সেই সময়ে আমরা তরুণ ছিলাম, সৃষ্টিকর্তা আমাদের সাহসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে মানসিক সংকল্প ও সক্ষমতা দান করেছিলেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম আসে এবং চলে যায়, কিন্তু দেশ ও জাতির ভাগ্য বদলে অংশ নেওয়ার সুযোগ সবার হয় না। আমাদের সে সৌভাগ্য হয়েছিল।
উপদেষ্টা আরও বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান এ কারণেও যে, ২০২৪ এর জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের সংকটাপূর্ণ সন্ধিক্ষণে আমি আবার একটি সুযোগ পেয়েছি, তাই আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে ১৯৭১ এর একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি আমার কমান্ডার ইন চীফ সম্পর্কে কিছু বলার সুযোগ পেয়েছি।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, জেনারেল ওসমানী মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ী সর্বাধিনায়ক। যার বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ফারুক-ই-আজম আরও বলেন, ইতিহাসে বিজয়ী সমর নায়ক হতে পারা একটি বিরল সম্মান এবং সৌভাগ্যের বিষয়। সৃষ্টিকর্তা জেনারেল ওসমানীকে সেই সম্মানে সম্মানিত করেছেন। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, জাতি তাঁকে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে।
উপদেষ্টা বলেন, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে গণতন্ত্রের দৃঢ়চেতা সাহসী নেতা হিসেবেও জেনারেল ওসমানী অমর হয়ে থাকবেন। ১৯৭৪ সালে পয়লা মে একদলীয় সরকার ব্যবস্থা বাকশাল প্রবর্তনের বিরোধিতা করে জেনারেল ওসমানী সংসদ সদস্য পদ, মন্ত্রিত্ব এবং আওয়ামী লীগের সদস্য থেকে পদত্যাগ করেন। এরকম অনন্য ব্যক্তিত্ব ও মানুষ সত্যিকার অর্থেই উদাহরণ সৃষ্টিকারী হিসেবে ইতিহাসে প্রতিভাত হয়ে আছেন।
ওসমানী স্মৃতি পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) এম আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে সাবেক সচিব মোফাজ্জল করিম, সাবেক উপদেষ্টা ইফতেখার আহমেদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসহাব উদ্দিন, সাবেক সচিব এহছানে এলাহী, সাবেক অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বক্তৃতা করেন।