শিশু নুরুজ্জামানের বাদাম বিক্রির টাকায় চলে পরিবার

কাঁধে বাদামের ঝুড়ি। ছুটে চলেছেন এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। যে বয়সে থাকার কথা ছিল স্কুলের বারান্দায়, সে বয়সে টানছেন সংসার নামক ঘানি। মাঠে যখন তার বয়সী ছেলেগুলো খেলছিল, সে তখন বাদাম বিক্রিতে ব্যস্ত। মাত্র ১২ বছর বয়সী নুরুজ্জামান জীবনযুদ্ধে এক অক্লান্ত হার না মানা সৈনিক।
জন্মের পর থেকেই দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত এই কিশোরের জীবন অন্যদের চেয়ে আলাদা। নুরুজ্জামান উত্তরের জেলা দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের কাজল গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে। তার বাবা শারীরিক প্রতিবন্ধী। মা মানসিক ভারসাম্যহীনের মতো। সংসারের উপার্জনক্ষম কেউ নেই। ছোট বয়সেই নুরুজ্জামান হয়ে উঠেছে পরিবারের একমাত্র ভরসা।
জানা গেছে, নুরুজ্জামান প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাদামের ঝুড়ি নিয়ে স্থানীয় বাজার থেকে ৩০০ টাকায় আড়াই কেজি কাঁচা বাদাম কেনেন। এসব বাদাম ভেজে দেন তার দাদি। এরপর বাদাম নিয়ে বের হয়ে যান পৌর শহরের অলিগলিতে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রোদ-বৃষ্টি-শীত উপেক্ষা করে বাদাম বিক্রি করেন নুরুজ্জামান। কোনোদিন ৪৫০, আবার কোনো দিন ৫০০ টাকার বাদাম বিক্রি হয়। খরচ বাদে ১৫০-২০০ টাকা লাভ হয় তার। সেই টাকায় চলে সংসার।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে নুরুজ্জামান বলেন, বাবা-মা দুজনেই অসুস্থ। আমার দাদি বাদাম ভেজে দেন, সেই সাথে রান্না করেন। আমাদের থাকার জায়গা দুই শতক জমি ব্যতীত আর কিছুই নেই। বাদাম না বেচলে, না খেয়ে থাকতে হবে। ছোট বোন মাদ্রাসায় পড়ে। তার খরচও আমাকে চালাতে হয়।
নুরুজ্জামানের দাদি বলেন, এই বয়সে ছেলেটার স্কুলে থাকার কথা ছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সংসারের ভার এখন তার ছোট্ট কাঁধে। এটা ভেবে খুব কষ্ট লাগে।
সাদেকুল ইসলাম নামে স্থানীয় একজন বলেন, ছেলেটা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করে। আমরা চেষ্টা করি সাহায্য করতে, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। যদি সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসতেন, তাহলে হয়তো তার জীবনটা এমন হতো না।
স্থানীয় মসজিদের ইমাম মো. মিজানুর রহমান বলেন, নুরুজ্জামান আমার প্রতিবেশী। আমিও যথাসাধ্য সাহায্য করি। এই বয়সী ছেলেটার পড়াশোনা করার কথা, খেলার মাঠে সময় কাটানোর কথা। দারিদ্র্য আর পারিবারিক সংকট তাদের শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করছে। যদি সমাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এগিয়ে আসতেন, তাহলে হয়তো সে আবার পড়ালেখায় ফিরতে পারত।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. রুস্তম আলী বলেন, এই পরিবারটি অত্যন্ত অসহায়। আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী সাহায্য করি এবং সরকারি কোনো অনুদান এলে তাদের দেওয়ার চেষ্টা করি।
এ বিষয়ে বীরগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, নুরুজ্জামানের বাবা প্রতিবন্ধী ভাতা পান। তবে এই পরিবারের আরও সহায়তা প্রয়োজন। আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা তাদের সহযোগিতার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব।