‘ডিসেম্বরে নির্বাচন সম্ভব নয়’, এ কথা আমি বলিনি : নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘ডিসেম্বরে নির্বাচন সম্ভব নয়’—একথা আমি বলিনি। আমি বলেছিলাম দেশের যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ যেভাবে নাজুক অবস্থায় আছে, এ রকম নাজুক অবস্থা নির্বাচন করা অনেক কঠিন হবে। এই পুলিশ প্রশাসনে কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা নেই। তাদের সক্ষমতা পরীক্ষা হয় না দীর্ঘদিন ধরে। নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবশ্য্ই উন্নত করতে হবে। সেটার জন্য সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলো, বিভিন্ন সামাজিক শক্তি যারা রয়েছে তাদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে। সহযোগিতা করতে হবে।
আজ শুক্রবার (৭ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরে দলটির অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন এনসিপির আহ্বায়ক। এ সময় দুই দিনের ইফতার কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকার দেশের কিছু কিছু গণমাধ্যমে ভুল ব্যাখ্যা করেছে বলে অভিযোগ করে নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, রয়টার্সের ইন্টারভিউতে কিছু মিস কোড হয়েছে। আমি বলেছিলাম যে, আমাদের আর্থিক বিষয়ে সমাজের যে সচ্ছল মানুষ বা শুভাকাঙ্ক্ষী রয়েছে তারা মূলত আমাদেরকে সহযোগিতা করে। আমরা একটা ক্রাউড ফান্ডিংয়ের দিকে যাচ্ছি। অনলাইন এবং অফলাইন কেন্দ্রিক। ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে কার্যালয় স্থাপনসহ ইলেকশন ফান্ডিং রেইজ করব। বিভিন্ন গণমাধ্যমে একটা ভুল তথ্য এসেছে, এটা সংশোধনের জন্য অনুরোধ থাকবে।
যেকোনো সময়ে নির্বাচনের জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে দলটির আহ্বায়ক বলেন, আমরা বলেছি জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি গণপরিষদ নির্বাচন দেখতে চাই। এ মুহূর্তে নির্বাচনই এনসিপির একমাত্র দাবি নয়। আমরা দৃশ্যমান বিচার দেখতে চাই। ঐক্যমতের জুলাই সনদ কার্যকর চাই, যেখানে সকল রাজনৈতিক দলের স্বাক্ষর থাকবে। জনগণ দেখতে পারবে কোন দল কোন সংস্কারের পক্ষে আছে, কোন দল বিপক্ষে আছে। নির্বাচনের আগে জুলাই সনদ আমরা কার্যকর দেখতে চাই। জুলাই ঘোষণাপত্রের যে কথা ছাত্রদের পক্ষ থেকে উঠেছিল তার বাস্তবায়ন দ্রুত সময় দেখতে চাই।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, নাগরিক পার্টির নারী সদস্যের টার্গেট করে সাইবার জগতে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বুলিং চলছে। এক ধরনের হেনস্তার মধ্যে দিয়ে তাদের যেতে হচ্ছে। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের অনুসারীরা এই কাজে বেশি যুক্ত রয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে নারীদের নিরুৎসাহিত করতে টার্গেট করা হচ্ছে। যাতে নারীরা রাজনৈতিক কাজে, দেশ গঠনের কাজে যুক্ত হতে না পারে। তাদের মেন্টাল ট্রমার মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
এ দিন দলটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজকের সভায় জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে সাম্প্রতিক দেশের বিভিন্ন স্থানে নারীদের ওপর সহিংসতা ঘটছে, ধর্ষণের মতো ঘটনা, ইভটিজিংয়ের মতো ঘটনা ঘটছে। এ সব ঘটনা প্রেক্ষিতে নাগরিক পার্টি উদ্বেগ ও নিন্দা জানাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, জনপরিসরে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নারী নিপীড়নকারীদের যথাযথ বিচারের আওতায় আনতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার বলেন, জুলাই ও আগস্টের অংশীজনদের নিয়ে আগামী ১০ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইফতার পার্টির আয়োজন করা হবে। সারা দেশের সকল অংশীজনরা অংশ নিবেন। ১১ মার্চ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, বিশিষ্টজনদের নিয়ে ইফতার পার্টির আয়োজন করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, হাজারের ওপর মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এখনো আমাদের বাবারা-মায়েরা তাদের সন্তানের মরদেহ কোথায় দাফন করা হয়েছে সেটা খুঁজে বেড়াচ্ছে। শতাধিক মরদেহ রায়ের বাজার কবরস্থানে বেওয়ারিশ দাফন করা হয়েছে। যে খুনির নির্দেশে এত বড় একটি হত্যাকাণ্ড হল। অন্তত ওই খুনিটার বিচার আমরা বাংলাদেশে দেখতে চাই।
সারজিস আলম আরও বলেন, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো কেন যেন নির্বাচনের কথা আসলে নির্বাচন পেছানোর ভয়টা পান। কেন যেন শুধু আমাদের মাথায় এক কথা, নির্বাচন হবে, ক্ষমতায় যাবো-এই চিন্তাটা কাজ করে। গণঅভ্যুত্থানে নির্বিচারে হত্যার বিচারের দাবিতে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের উচিত অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ দেওয়া।