জীবন যুদ্ধে হার না মানা রাবেয়া খাতুন

জীবন যুদ্ধে হার না মানা এক সংগ্রামী নারী রাবেয়া খাতুন। বয়স ৪৫ এর কাছাকাছি। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার ভ্যানচালক কাউছার মিয়ার স্ত্রী। ছয় মেয়ে ও তিন ছেলে নিয়ে তাদের সংসার। বছর পাঁচেক আগেও ভ্যানগাড়ি চালানোর উপার্জিত অর্থ দিয়ে পরিবার নিয়ে সুখেই ছিলেন কাউছার-রাবেয়া দম্পতি।
কিন্তু করোনাকালীন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন কাউছার মিয়া। ডাক্তার তাকে ভ্যানগাড়ি না চালানোর পরামর্শ দেন। নিজের একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অভাব হানা দেয় কাউছার-রাবেয়া দম্পতির সংসারে। একদিকে অসুস্থ স্বামী অন্যদিকে ৯ ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে। কীভাবে চলবে তাদের জীবন? কী করেই বা জীবিকা নির্বাহ করবেন—চিন্তায় পড়ে যান রাবেয়া।
তবে জীবন যুদ্ধে রাবেয়া খাতুন কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেননি। হার মানেননি জীবন সংগ্রামে। কারও কাছে হাত না পেতে সংসারের হাল ধরতে রাবেয়া খাতুন নবীনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজারে ফুটপাতে সবজি বিক্রি শুরু করেন। এ কাজে কিছুটা সহযোগিতা করেন তার অসুস্থ স্বামী কাউছার মিয়া ও পাশের ব্যবসায়ীরা। এতে কিছুটা সফলও হন তিনি। নিজের সংসার খরচ চালিয়ে ছয় মেয়ের মধ্যে পাঁচ মেয়েকে ইকোমধ্যে বিয়ে দিয়েছেন। স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করাচ্ছেন ছোট দুই ছেলে-মেয়েকে। আর বাকি দুই ছেলে এখন অন্যান্য কাজ করে পরিবারের হাল ধরার চেষ্টা করছেন।
স্থানীয়রা জানান, রাবেয়া খাতুন একজন সংগ্রামী নারী। নিজের সংসার সামাল দিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাজারে সবজি বিক্রি করছেন। কখনো কারও সাথে খারাপ আচরণ করতে দেখিনি তাকে। তার দোকানে সবসময় তরতাজা সবজি পাওয়া যায়। তাই তার দোকানে কেনাবেচাও ভালো হয়।

রাবেয়া খাতুনের স্বামী কাউছার মিয়া বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। আগে ভ্যানগাড়ি চালিয়ে সংসার চালাতাম। করোনার সময় অসুস্থ হওয়ার পর সবজি বিক্রি শুরু করি। কিন্তু অসুস্থতার কারণে তাও পরিচালনা করতে পারতাম না। এরপর সংসারের কথা চিন্তা করে আমার স্ত্রী আমার সবজি ব্যবসার দায়িত্ব নেন। আমি যতটুকু পারি তাকে অসুস্থ শরীর নিয়ে সহযোগিতা করি, বাকিটা সে সামলে নেয়। এখন সংসার নিয়ে কোনোভাবে খেয়ে-পড়ে বেঁচে আছি।
জীবন যুদ্ধে সংগ্রামরত রাবেয়া খাতুন এনটিভি অনলাইনকে জানান, তার দোকানে যে সবজি বিক্রি হয়, তা থেকে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার মতো আয় হয়। তার স্বামী অসুস্থ হওয়াতে পাইকারি সবজির বাজার থেকে তাদের সবজি ক্রয় করা সম্ভব হয় না। ফলে স্থানীয় আড়তদার কিংবা কৃষকদের থেকে তাদের সবজি ক্রয় করে বিক্রি করতে হয়। যার কারণে তাদের আয় অন্য ব্যবসায়ীদের থেকে কম হয়। আয় কম হলেও তিনি সবসময় তরতাজা সবজি বিক্রি করেন। এর ফলে তার নির্দিষ্ট কিছু ক্রেতাও রয়েছে।

রাবেয়া খাতুন আরও বলেন, তার এই পথ কখনোই সহজ ছিল না। ব্যবসার শুরুতে সমাজ থেকে তীব্র বাধার সম্মুখীন হতে হয় তাকে। ‘নারীদের জন্য ব্যবসা করা কঠিন’, প্রচলিত এই ধ্যানধারণা ভেঙে তিনি সফল হয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।’