চাকরি ছেড়ে ‘কালো সোনা’ চাষে সফল কুষ্টিয়ার আবু তালেব

গ্রামীণ সড়কের পাশে জিকে ক্যানেল। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে বাতাসে দোল খাচ্ছে সাদা সাদা ফুল। কাছে গিয়ে বোঝা গেল এগুলো পেঁয়াজের ফুল বা কদম ফুল। এই সাদা ফুলগুলো শুকিয়ে কিছুদিন পর বের হবে কালো বীজ। যার বাজারে ব্যাপক চাহিদার পাশাপাশি রয়েছে ভালো দাম। সেজন্য এটিকে ‘কালো সোনা’ বলে থাকেন অনেকেই। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হোগলা গ্রামে তিনটি প্লটে প্রায় ১৯ বিঘা জমিতে কালো সোনা খ্যাত এই পেঁয়াজ বীজ চাষ করেছেন ওই গ্রামের কৃষক আবু তালেব। তিনি হোগলা গ্রামের মৃত হাজী গফুর শেখের ছেলে। তিনি চাকরি ছেড়ে পেঁয়াজ বীজ চাষ শুরু করেছেন।
জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন আবু তালেব। তবে চাকরির চেয়ে পেঁয়াজ বীজ চাষ লাভজনক। তাই চাকরি ছেড়ে দিয়ে ওই বছরেই তার বাবার দেখাদেখি ১৬ শতক (১০ কাঠা) জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষ শুরু করেছিলেন। সেখান থেকে অল্প অল্প করে চাষ শেখা তার। এরপর সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এক বিঘা দুই বিঘা করে বাড়তে থাকে তার পেঁয়াজ বীজ চাষ। ২০০৩ সালে প্রায় ৭ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষ করে বেশ লাভের মুখ দেখেন। এরপর আর জীবিকার জন্য তাকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
চাষি আবু তালেব জানান, পেঁয়াজ রোপণ, পরিচর্যা, জমির ইজারাসহ প্রতি বিঘায় খরচ লেগেছে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। চলতি মৌসুমে তিনটি প্লটে তিনি ১৯ বিঘা জমিতে সুপার কিং, লালতীর কিং ও হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজ রোপণ করেছেন। সবমিলে ১৯ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষে তার খরচ হয়েছে প্রায় ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ১৫ থেকে ২০ দিন পরে পেঁয়াজ বীজ ঘরে তুলবেন তিনি। প্রতি বিঘায় গড়ে দুই মণ করে ১৯ বিঘায় প্রায় ৩৮ থেকে ৪০ মণ ফলনের প্রত্যাশা করছেন তিনি। প্রতিকেজি আড়াই হাজার টাকা দরে প্রায় ৪০ থেকে ৪২ লাখ টাকা বীজ বিক্রি সম্ভব বলে জানান তিনি।

আবু তালেবের স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন জানান, মাঠ থেকে ফুল কেটে বাড়িতে এনে প্রথমে রোদে শুকানো হয়। এরপর মেশিনে মাড়াই করে পানি দিয়ে ধুঁয়ে ফের শুকিয়ে প্লাস্টিকের কন্টিনারে মজুত করা হয়। বপনের সময় চাহিদা মতো ন্যায্যমূল্যে বাড়ি থেকে পেঁয়াজ বীজ কিনে নিয়ে যায় কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষক করিম মন্ডল জানান, আবু তালেব তার জমি ইজারা নিয়ে পেঁয়াজ বীজ চাষাবাদ করেছেন। গাছ ও ফুল ভালো হয়েছে। ভালো ফলন হলে আগামী বছর ১০ কাটা জমিতে তিনিও পেঁয়াজ বীজ চাষাবাদ করবেন।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাইসুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে প্রায় ১৯ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষাবাদ করা হয়েছে। কৃষকদের পেঁয়াজ বীজ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বীজ উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।