ঋণ পরিশোধ ও মাদকের টাকা জোগাড় করতেই গোপালগঞ্জে খুন ও ডাকাতি

ঋণ পরিশোধ ও মাদকের টাকা জোগাড় করতেই আসামিরা কোটালীপাড়ায় খুন ও ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানিয়েছেন গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। আজ শনিবার (১৫ মার্চ) দুপুরে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান তাঁর কার্যালয়ের হলরুমে সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।
পুলিশ সুপার বলেন, কোটালীপাড়ায় আলোচিত ডাকাতি ও হত্যার ঘটনায় গত শুক্র ও শনিবার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসময় তাদের কাছ থেকে লুট হওয়া ২৪ হাজার ১০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন উপজেলার চৌরখালী গ্রামের সামিউল শেখ, পার্শ্ববর্তী বংকুড়া গ্রামের মোরশেদ আলম ওরফে কামাল ও একই গ্রামের শওকত আলী ভূইয়া।
মিজানুর রহমান আরও বলেন, গত ১১ মার্চ মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার কুশলা ইউনিয়নের লাখিরপাড় গ্রামের দন্ত্যচিকিৎসক পল মজুমদারের বাড়িতে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এসময় পল মজুমদারের ছেলে পিয়াস মজুমদারকে হাত পা বেঁধে হত্যা করে রেখে যায় ডাকাত দল। এ ঘটনায় ওইদিনই পল মজুমদার বাদী হয়ে কোটালীপাড়া থানায় একটি হত্যা ও ডাকাতি মামলা দায়ের করেন।
জেলার এই শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বাদী পল মজুমদার ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে ঘরে রেখেছিলেন। এই খবর গ্রেপ্তারকৃতরা জেনে যায়। ঘটনার দিন পল মজুমদার ও তার স্ত্রী তাদের কর্মস্থলে গেলে দুপুরের দিকে আসামিরা পাঁচজনে মিলে প্রথমে বাড়িতে প্রবেশ করে। ঘরে ঢুকে লুট করার সময় পল মজুমদারের ছেলে দেখে ফেলায় তাকে প্রথম হাত পা বেঁধে ফেলে। পরে লোক জানাজানি হয়ে যাবে এই ভয়ে তাকে হত্যা করা হয়। এসময় ঘর থেকে তারা ১ লাখ ৯ হাজার টাকা নিয়ে যায়।
পুলিশ সুপার আরও জানান, এই ঘটনার পর পুলিশের একটি টিম ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য অভিযানে নামে। ঘটনার পরদিন ১২ মার্চ সন্ধ্যায় উপজেলার কুশলা ইউনিয়নের খান মার্কেট এলাকা থেকে মোর্শেদ আলম ওরফে কামালকে গ্রেপ্তার করে কোটালীপাড়া থানা পুলিশ। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে এই ঘটনার স্বীকারোক্তি দেয়। তার দেওয়া তথ্যমতে অপর আসামি সামিউল শেখকে বাগেরহাটের কচুয়া থানার কামারগাতী এলাকা থেকে ও আরেক আসামি শওকত আলী ভুঁইয়াকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মিজানুর রহমান বলেন, গ্রেপ্তারের পর আসামিরা জানিয়েছেন তারা কেউ মাদকাসক্ত আবার কেউ ঋণগ্রস্ত। মাদক ও ঋণের টাকা জোগাড় করতেই তারা এই ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। ডাকাতিকালে ঘর থেকে নগদ ১ লাখ ৯ হাজার টাকা ছাড়াও একটি রুপার চেইন তারা লুট করেছে। ঘটনার সময় আসামিরা ৫ জন ছিলেন বলে তারা স্বীকার করেছে। আমরা এখন পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছি। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) কাজী মাহবুবুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড ওয়াটস) মো. সারোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবু সালেহ মো. আনসার উদ্দিন, সদর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান, কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত ১১ মার্চ সকালে লাখিরপাড় গ্রামের দন্ত্যচিকিৎসক পল মজুমদার ও তার স্ত্রী গোপালগঞ্জ চক্ষু হাসপাতালের নার্স অনিতা বৈদ্য প্রতিদিনের মতো তাদের স্ব স্ব কর্মস্থলে চলে যায়। এ সময় এই দম্পতির একমাত্র ছেলে পিয়াস মজুমদার বাড়িতে ছিল। এ সুযোগে পিয়াসকে খুন করে ডাকাতরা বাড়ির আসবাবপত্র তছনছ করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যায়।