পরিবেশগত অধিকার রক্ষা করা সবার দায়িত্ব : পরিবেশ উপদেষ্টা

পরিবেশগত অধিকার রক্ষা করা সরকার, ব্যবসা সংগঠনসমূহ, নাগরিক সমাজ এবং সব সম্প্রদায়ের সম্মিলিত দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) পরিবেশ উপদেষ্টা ব্যাংককে জাতিসংঘ সম্মেলন কেন্দ্রের ‘এশিয়ায় করপোরেট টেকসই এবং পরিবেশগত অধিকার’ সম্মেলনের উদ্বোধনী (পূর্ণাঙ্গ) অনুষ্ঠানে ঢাকায় তার বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় উপদেষ্টা এই কথা বলেন।
এ বছর সম্মেলনটির প্রতিপাদ্য হল ‘একটি পরিষ্কার, স্বাস্থ্যকর এবং টেকসই পরিবেশের অধিকার : করপোরেট সম্পৃক্ততার পুনর্নির্ধারণ।’
শক্তিশালী আইনি কাঠামোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, কিছু দেশ বিচারিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে পরিবেশগত অধিকারকে স্বীকৃতি দিলেও, অনেক দেশে এখনও এই বিষয়ে সুস্পষ্ট সাংবিধানিক বিধানের অভাব রয়েছে।
পরিবেশ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এটি পরিবর্তন করতে হবে। অতিরিক্ত মানবকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি জীববৈচিত্র্যকে অবহেলিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। এ সময় সতর্কতামূলক নীতি, দূষণকারীর অর্থ প্রদানের নীতি এবং যথাযথ পরিশ্রমের ওপর ভিত্তি করে টেকসই উন্নয়নের মূলে নিহিত আইনি কাঠামো তৈরির আহ্বান জানান।
পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণে দ্বৈত মানদণ্ডের সমালোচনা করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর রপ্তানির ওপর কঠোর শর্ত আরোপ করা হয়, কিন্তু উন্নত দেশগুলো থেকে আমদানি নিয়ন্ত্রিত হয় শিথিল মান দ্বারা।
জাহাজ ভাঙা শিল্পের বিপজ্জনক বর্জ্য স্থানান্তর এবং বায়ুদূষণের মানদণ্ডের বৈষম্য তুলে ধরে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘একজন পশ্চিমা নাগরিকের ফুসফুস বাংলাদেশের নাগরিকদের ফুসফুস থেকে আলাদা নয়।’
রিজওয়ানা হাসান তাঁর বক্তব্যে করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) কথা উল্লেখ করে তিনি যুক্তি দেন যে, স্বতঃপ্রবৃত্ত এসআর নীতিসমূহ অপর্যাপ্ত। প্রকৃত করপোরেট জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত।
ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো যেন দায়িত্ব এড়াতে না পারে তা নিশ্চিত করতে পরিবেশ উপদেষ্টা রাষ্ট্রসমূহকে কার্যকর আইনে মূল পরিবেশগত নীতিসমূহ অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান।
পরিবেশ উপদেষ্টা পরিবেশগত তথ্যাবলী জনসাধারণের আয়ত্ত্বাধীন করার জন্য আইনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন এবং বলেন যে, কিছু দেশে তথ্য অধিকার আইন থাকলেও অনেকে করপোরেট পরিবেশগত তথ্য বাদ দেয়, যা মানুষের ব্যবসায়িক প্রভাব মূল্যায়ন করার ক্ষমতা সীমিত করে দেয়।
বিধিনিষেধের অধীনে সক্রিয়তা দমন করার পরিবর্তে রিজওয়ানা হাসান রাষ্ট্র প্রধান ও সরকারদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে জনসাধারণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং পরিবেশ রক্ষাকারীদের সুরক্ষার জন্য আহ্বান জানান।
বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত সফল আইনি মডেল থেকে শিক্ষা নিয়ে পরিবেশগত ট্রাইব্যুনালগুলোকে শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন পরিবেশ উপদেষ্টা।
বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধারের জন্য উৎসর্গকৃত ক্ষতিপূরণ তহবিলের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা জানান ক্ষতি করে তা নিয়ন্ত্রণ করার চেয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা দিয়ে করপোরেট দায়িত্ব শুরু করা উচিত।
করপোরেট ‘গ্রিনওয়াশিং’ এর বিরুদ্ধে সতর্ক করে পরিবেশ উপদেষ্টা সরকার, ব্যবসা এবং সম্প্রদায়কে ‘টেকসই সার্টিফিকেশন’ বিশ্বাসযোগ্য কিনা তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
পরিবেশগত সক্রিয়তাকে দুর্বল করে এমন ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে সতর্ক করে পরিবেশ উপদেষ্টা মিডিয়ায় দেওয়া বর্ণনার ওপর সম্মিলিত নিয়ন্ত্রণের ওপরও জোর দেন।
‘দায়িত্বশীল সমাজ গঠনে পরিবেশগত শিক্ষার ভূমিকার ওপর জোর দিয়ে রিজওয়ানা বলেন, ‘পরিবেশগত সচেতনতা নিয়ে বেড়ে ওঠা শিশুরা করপোরেট জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। সরকার বা করপোরেশন কারোরই প্রকৃতি ধ্বংস করার অধিকার নেই ‘
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি আপনি একটি সমুদ্র, একটি বন বা একটি পাহাড় তৈরি করতে না পারেন, তবে আপনার সেগুলো ধ্বংস করার কোনো অধিকার নেই।’