অর্থের বিনিময়ে বিটিভিতে শিল্পী তালিকাভুক্তির অভিযোগে দুদকের অভিযান

অর্থের বিনিময়ে ১ হাজার ৭৯১ জন শিল্পীর বিটিভিতে তালিকাভুক্তি, একই অনুষ্ঠান পুনঃপ্রচার করে নতুন হিসেবে বিল উত্তোলন, প্রকল্পে ভুয়া বিল-ভাউচার দেখিয়ে টাকা উত্তোলনসহ নানাবিধ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীর রামপুরা বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ভবনে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয় থেকে একটি এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান পরিচালনা করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এ অভিযান চালানো হয়।
অভিযান পরিচালনাকালে এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযোগ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে। নথিপত্রের পর্যালোচনায় বেশ কিছু অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পায় টিম। বিল-ভাউচার সংক্রান্ত অভিযোগগুলোর সত্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে ভাউচারগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। সংগৃহীত রেকর্ডপত্র যাচাই সাপেক্ষে টিম কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
এদিকে, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বিশেষ বরাদ্দের ৭৭টি প্রকল্পের প্রায় ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয় থেকে আজ অপর একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালিত হয়। মোট ২০৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বরাদ্দকৃত প্রকল্পগুলোর মধ্যে পাঁচটি প্রকল্পের সরেজমিন পরিদর্শনে অনিয়ম ও জালিয়াতির প্রাথমিক প্রমাণ পায় দুদক টিম।
অনিয়মগুলোর মধ্যে রয়েছে ২৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ব্যয়ে উত্তর আটাশীবাড়ী কবরস্থানের মাঠ ভরাট প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিবর্তে স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তির ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি সরকারি অর্থে ভরাট করা হয়েছে; ২৬ লাখ ৪৯ হাজার টাকা ব্যয়ে উত্তর আটাশীবাড়ী হেফজোখানার সামনের মাঠ ভরাট প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা থাকলেও সেখানে কোনো হেফজখানা পায়নি দুদক টিম, বরং সেখানেও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি ভরাট করা হয়েছে; ৩৯ লাখ ১৬ হাজার টাকা বরাদ্দপ্রাপ্ত ডগলাস মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে মাঠ ভরাট প্রকল্পে সামান্য মাটি ভরাট করে বরাদ্দের বেশিরভাগ অর্থ আত্মসাতের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে; ৪৯ লাখ ২৩ হাজার টাকা বরাদ্দের গাবভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাট প্রকল্পের কাজ আংশিকভাবে সম্পন্ন করে অধিকাংশ অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের বক্তব্য ও পরিদর্শনে প্রতীয়মান হয়েছে; ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দের শেখ হাসিনা আদর্শ সরকারি মহাবিদ্যালয়ের মাঠ ও পুকুরপাড় ভরাট প্রকল্পে সামান্য পরিমাণ মাটি ফেলে বড় অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।
সার্বিক বিবেচনায়, এনফোর্সমেন্ট অভিযানকালে সরকারি তহবিল ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহারের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা চিহ্নিত হয়েছে।
এ ছাড়া পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসি কর্তৃক বগুড়ায় ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণকাজে অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের বগুড়া জেলা কার্যালয় থেকে অপর একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের শুরুতে টিম সংশ্লিষ্ট সাব-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে অভিযোগের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে টিম মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে, বিভিন্ন সাইট পরিদর্শন করে এবং অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তথ্য/রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে।
মাদারীপুর গণপূর্ত বিভাগ কর্তৃক জেলার ‘সমন্বিত সরকারি অফিস ভবন’ নির্মাণে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার, মাদারীপুর গণপূর্ত অফিসের গেট নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালিত হয়।
অভিযানকালে এনফোর্সমেন্ট টিম ‘সমন্বিত সরকারি অফিস ভবন’ নির্মাণ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা ও সরেজমিন পরিদর্শন করে। এ ছাড়া অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণের বক্তব্য গ্রহণসহ বিভিন্ন তথ্য ও রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়। প্রাথমিক পর্যালোচনায় ভবন নির্মাণে বেশ কিছু অসংগতি পাওয়া যায়।