সূর্যমুখীতে স্বপ্ন দেখছে সুবর্ণচরের কৃষকেরা

নোয়াখালীর সুবর্ণচরের লবণাক্ত জমিতে বাড়ছে সূর্যমুখীর চাষ। এতে সুবর্ণচর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের বিস্তৃত মাঠ জুড়ে এখন পরিপক্ক হলুদ সূর্যমুখী ফুলের সমারোহ। কিছুদিনের মধ্যেই এ ফসল কাটা শুরু হবে। এতে স্বল্প খরচে বাম্পার ফলনে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। মূলত লবণ সহিষ্ণু এ ভোজ্য ফসল আবাদে দিনদিন আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, উপজেলার ৬ ইউনিয়নের সূর্যমুখী ফুলের চাষ দ্রুত বাড়ছে। চলতি মৌসুমে ১০১ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। চাষিদের সূর্যমূখী চাষে আকৃষ্ট করতে কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে। কৃষকদের জমি চাষ থেকে শুরু করে ফসল কাটা পর্যন্ত কৃষকদের সঙ্গে থাকছেন কর্মকর্তারা। কৃষকদের অর্থনৈতিক সহযোগিতার পাশাপাশি পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা করছেন তারা।
সাড়ে তিন একর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন তাজুল ইসলাম নামে এক কৃষক। তিনি বলেন, সূর্যমুখী চাষে এক বিঘা জমিতে খরচ হয় আট থেকে ১০ হাজার টাকা। সামান্য রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়। আর দুবার সেচ দিতে হয়। নভেম্বরে বীজ বপনের পর ৮০ থেকে ৯৫ দিনের মধ্যে তোলা যায়। প্রতি এক বিঘায় উৎপাদিত বীজ থেকে আয় হয় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা।
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। অন্য ফসলের তুলনায় খরচ কম, সে কারণে লাভ বেশি হওয়ায় এ ফুলের চাষ দিন দিন বেড়েই চলছে। আগে এই উপজেলাতে তেল ভাঙ্গানোর কোনো ব্যবস্থা না থাকলেও এখন সুবর্ণচর উপজেলায় একাধিক তেল শোধনের মেশিন রয়েছে বলে কৃষকরা অনেক খুশি।
ফুলবাগানে ছবি তুলতে আসা দর্শনার্থীরা বলেন, সুবর্ণচরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে এই ফুলগুলো। দেখতে যেমন সুন্দর, এগুলোর তেল খেতেও অনেক সুস্বাদু। তাই আমরা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঘুরতে এসে ছবি না তুলে থাকতে পারি না। আমরা চাই উপজেলার মানুষ সূর্যমুখী চাষের দিকে আরও অগ্রসর হোক। আরও বেশি করে যেনো সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেন এই উপজেলাবাসী।
ইমামা উদ্দিন সুমন নামে এক সাংবাদিক জানান, অনাবাদী পতিত জমিতে সূর্যমুখী চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন প্রান্তিক চাষিরা। সবুজ মাঠে হলুদের রাজ্যটি দেখতে এ মৌসুমে ভিড় জমাচ্ছেন প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকরা। সম্প্রতি উপকূলীয় এ জনপদে গিয়ে দেখা যায় সূর্যমুখী ফুল চাষের অপার সম্ভাবনা। এ এলাকার লবণাক্ত অনাবাদী জমিতে স্বল্প খরচে বাড়ছে সূর্যমুখীর বাম্পার ফলনে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ বলেন, সুবর্ণচরে অনেক জমিতে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ হয়েছে। ফলন অনেক ভালো হয়েছে। অন্যদিকে গতবারের তুলনায় এ বছর সূর্যমুখী ফুলের দাম ভালো পাবে বলেও আশা করছি। আগে তেল শোধন করার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এ বছর একাধিক ব্যবস্থা রয়েছে। এতে সুবর্ণচরের মানুষের তেলের চাহিদা মিটিয়ে দেশ ও দেশের বাইরে রপ্তানি করা সম্ভব।