শোলাকিয়ার ইমাম ফরিদ উদ্দিন মাসউদের নিয়োগ অবৈধ : হাইকোর্ট

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের সাবেক প্রধান ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইন লঙ্ঘন হয়েছে বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকার ও বিচারপতি এ. কে. এম. রবিউল হাসান রিটের শুনানি শেষে রুল মঞ্জুর করে গত ৪ মার্চ ফরিদ উদ্দিন মাসউদের নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করেন। হাইকোর্টের দেওয়া ওই রায়ের অনুলিপি গতকাল রোববার (৬ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
আদালত বলেন, ‘মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদের নিয়োগ আইন ও ন্যায্যতার পরিপন্থি ছিল এবং এটি অবৈধ বলে বিবেচিত হবে।’
১৯৫০ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহের জন্য ভূসম্পত্তি ওয়াকফ করে দেন দেওয়ান মোহাম্মদ দাদ খান। ওয়াকফ দলিলে তিনি বলেন, ‘আমার জীবিতকালের মধ্যে উক্ত ওয়াকফকৃত সম্পত্তির মোতোয়ালি আমি। আমার অভাব হলে ওই সময়ে আমার পুত্রদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ পুত্র মোতোয়ালি নিযুক্ত হবে। এবং তার অভাব হলে তখন পুত্রদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ পুত্র মোতোয়ালি নিযুক্ত হবে। এবং এভাবে ক্রমিক জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং তার অভাবে জ্যেষ্ঠ পুত্র পুরুষানুক্রমে মোতোয়ালি নিযুক্ত হবে। ওয়াকফ দলিলে বলা ছিল ঈদগাহে বছরে দুই দিন ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। তাতে মোতোয়ালি ইমাম নিযুক্ত করবেন।’
দলিল অনুসারে, ইমামের নিয়োগ পদ্ধতিতে কোনো বাহ্যিক হস্তক্ষেপ অনুমোদিত ছিল না। কিন্তু ২০০৯ সালে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেন, যা ছিল ওয়াকফ দলিলের পরিপন্থি।
পরে জেলা প্রশাসক কর্তৃক নিযুক্ত মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে ইমাম নিযুক্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহ হাইকোর্টে রিট করেন।
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, রিটকারীকে (আবুল খায়ের মো. ছাইফুল্লাহ) ওয়াকফ দলিল এবং অফিসিয়াল পদ্ধতি উভয় চেতনা অনুসরণ করে স্থায়ীভাবে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের প্রধান ইমাম হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। তাই মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে প্রধান ইমাম পদে নিয়োগ দেওয়াটা শুধু ওয়াকফ দলিলের চেতনার পরিপন্থি নয়, বরং আইনের পরিধিরও বাইরের ছিল।
হাইকোর্টের বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকার ও বিচারপতি এ. কে. এম. রবিউল হাসান রিটের শুনানি শেষে রুল মঞ্জুর করে ২০২৫ সালের ৪ মার্চ ফরিদ উদ্দিন মাসউদের নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, হয়বতনগর এ ইউ কামিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ আবুল খায়ের মোহাম্মদ নূরুল্লাহ টানা ৩০ বছর শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের ইমামতি করেন। ২০০৩ সালে বার্ধক্যের কারণে এ দায়িত্ব থেকে তিনি সরে যান। ২০০৪ সাল থেকে তার ছেলে আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহ কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের ইমামতি করেন। ২০০৯ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করার পর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ছাইফুল্লাহকে ইমামতির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়। পরে ইমামতির দায়িত্ব পান ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ। গত বছর ৫ আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর রামপুরা থানায় দায়ের করা একটি হত্যা মামলায় ফরীদ উদ্দীন মাসউদকে আসামি করা হয়। তখন থেকে তিনি পলাতক।