নববর্ষ উপলক্ষে গোপালগঞ্জে চড়ক পূজা ও গ্রামীণ মেলা

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে গোপালগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়েছে চড়ক পূজা ও গ্রামীণ মেলা। ব্যতিক্রমী এ চড়কে পিঠে বড়শি ফুড়ে একই সাথে ঘুরেছেন ৮ জন মানুষ। সাধারণত ২ থেকে ৪ জন চড়কে ঘুরানো হলেও বাংলাদেশে এটাই প্রথম যেখানে ৮ জন যুবককে ঘোরানো হচ্ছে দাবি আয়োজকদের। আর এই আয়োজনে গোপালগঞ্জ ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকে হাজার হাজার বিভিন্ন বয়সের মানুষের সমাগম ঘটে।
বুধবার বিকেলে (১৬ এপ্রিল) হাজারো মানুষের অপেক্ষা কখন ঘুরবে চড়ক। মানুষের পিঠের চামড়ায় মন্ত্রপুত করে বড়শি ফুড়ে বিশেষ প্রক্রিয়া শেষে চড়ক ঘোরানো শুরু হয়। গোধূলি সন্ধ্যায় চড়ক ঘোরানো হয়। তাই অপলক দৃষ্টিতে মনোমুগ্ধকর এমন দৃশ্য উপভোগ করতে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চপল্লী বড় ডোমরাশুর স্কুল মাঠে দূর দূরান্ত থেকে এসেছেন শিশু থেকে শুরু করে পরিবার পরিজনসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
বিকেল থেকে শুরু হয় পূজার্চনা। এরপর একে একে ৮ যুবকের পিঠে ফোড়ানো হয় ৫-৬ ইঞ্চির বড় আকৃতির বড়শি। তবে হয় না কোন রক্তপাত। কথিত আছে ১৪৮৫ খ্রিষ্টাব্দে রাজা সুন্দরনাথ এ পূজার আরম্ভ করেছিলেন। সেই থেকেই সনাতন ধর্মাবলম্বিরা চড়ক পূজা করে আসছেন। বিগত ২০১৭ সাল থেকে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বড় ডোমরাসুর গ্রামের স্কুল মাঠে এই চড়ক মেলা শুরু হয়। এমন আয়োজন দেখে বেজায় খুশি দর্শনার্থীরা।
চড়ক মেলার মূল আকর্ষণ চড়কঘুল্লী। এই চড়কঘুল্লী দেখতেই নারী-পুরুষ সহ হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বড় ডোমরাসুর গ্রামের পঞ্চপল্লী বড় ডোমরাসুর স্কুল মাঠে। মানুষের পিঠে ৫-৭ ইঞ্চি লোহার বড়শি ফুরিয়ে চরকায় ঘোড়ানো হয়। চড়কার ৮টি পাখায় ৮ জীবন্ত যুবকের পিঠে বড়শি ফুড়িয়ে রশি দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ১০-১২ জন মানুষ রশি ও বাঁশের সাহায্যে চড়ক ঘোরান। গোধূলি সন্ধ্যায় স্কুল মাঠে আট-দশ মিনিট চড়ক ঘুরানো হয়। চড়ক ঘুরানোর সময় পিঠে বড়শিবিদ্ধ মানুষ হাত পা নাড়িয়ে বিভিন্ন ভঙিতে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করেন। এ সময়ে মেলায় আগত হাজার হাজার মানুষ এই চড়ক উপভোগ করেন এবং উল্লাসে করতালি দেন। চড়কপূজাকে কেন্দ্র করে স্কুল মাঠে বসে গ্রামীণ মেলা।
চড়ক ঘুল্লী দেখতে আসা নববধূ তমা বিশ্বাস বলেন, চড়কে আমি ৬ জন পর্যন্ত ঘুরতে দেখেছি। কিন্তু ৮ জন ঘুরা এই প্রথম দেখলাম।
স্কুল শিক্ষার্থী কস্তুরী রায় বলেন, নববর্ষের এই দিনটির জন্য সারাবছর অপেক্ষায় থাকি। কারণ চড়ক আমাদের অনেক আনন্দ দেয়।
স্কুলশিক্ষক তাপস বিশ্বাস বলেন, এটি সনাতনীদের একটি ধর্মীয় উৎসব। পাশাপাশি বাঙালির ঐতিহ্য।
সুশান্ত বিশ্বাস বলেন, পরিবারে সবাইকে নিয়ে চড়ক দেখতে এসেছি। আগমী প্রজন্ম যাতে বাঙালির ঐতিহ্য ভুলে না যায় তার জন্য ছেলে-মেয়েদের চড়কের সাথে পরিচয় করানোটা জরুরি।
চড়ক পূজা আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য জুয়েল জানান, এটা শুধু ধর্মীয় নয় আচার বা পূজা নয় এটি বাঙালি সংস্কৃতি। আর সংস্কৃতিকে ধরে রাখতেই আমরা এই আয়োজন করি।