নদীগর্ভে বিলীনের আশঙ্কায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা

নদীর তীব্র ভাঙনে নোয়াখালীর মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ছোট ফেনী নদী ও বামনি নদীর কূল ঘেঁষে থাকা নোয়াখালীর পূর্বাঞ্চলের কোম্পানীগঞ্জ নামক উপজেলাটি। প্রতি বছরে প্রায় দুই কিলোমিটার করে ভাঙছে এই উপজেলাটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নে অব্যাহত নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে এলাকার মানুষের ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি। নদী ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ভাঙনের কবলে এই উপজেলাটি। গত বর্ষা মৌসুমে মুছাপুর ইউনিয়নে অবস্থিত মুছাপুর রেগুলেটর (স্থানীয় নাম, মুছাপুর ক্লোজার) ভেঙে যাওয়াতে এখন প্রতিদিন নদীর অব্যাহত ভাঙনে বিস্তীর্ণ হচ্ছে এই উপজেলা। ইতোমধ্যে ফসলি জমি, মাছের ঘের, বসত ভিটা হারিয়ে নিঃস্ব নদী পাড়ের কয়েক হাজার মানুষ।
ভুক্তভোগীরা জানান, গত কয়েক বছরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে কয়েক কিলোমিটার ভূমি ও মানুষের ঘর-বাড়ি, যা ইতোমধ্যে মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে দুটি ইউনিয়ন। স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করছেন, এভাবে নদীর ভাঙন অব্যাহত থাকলে অচিরেই কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এই বছর বর্ষার মৌসুমেও যদি নদীর ভাঙন অব্যাহত থাকে তাহলে আরও শত-শত পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়বে। অন্যদিকে, আজ থেকে দুই মাস আগে কিছু জিও ব্যাগ এনে রাখলেও কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। অতিদ্রুত এখানে বড় ও লম্বা সাইজের জিও টিউব ব্যাগ স্থাপন করা অতি জরুরি বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা জানান, মানুষের মাছের ঘের, মুরগি ফার্ম, কৃষি জমি, বসত ভিটা, বাড়ির বাগান, ক্ষেত-খামার, কবরস্থানসহ নানা স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ফলে ক্রমেই কোম্পানীগঞ্জের মানচিত্র ছোট হয়ে আসছে। এ উপজেলার দরিদ্র কৃষকদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র সম্বল ফসলি জমি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি মসজিদ, কিল্লা, সাইক্লোন সেন্টার, চরলেংটা সরকারি প্রাইমারি স্কুল, মাদ্রাসা, দোকানপাট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দরিদ্র পরিবারগুলো মাথা গোঁজার একমাত্র সম্বল বসতভিটা হারিয়ে আত্মীয়-স্বজন ও বিভিন্ন সরকারি ভবনে আশ্রয় নিচ্ছে। তাদের শিশু সন্তান ও বৃদ্ধসহ আশ্রয়ের একমাত্র অবলম্বন হিসেবে বেড়ি বাঁধের নিচে এবং মানুষের বাগানে ছোট ছোট কুঁড়েঘর নির্মাণ করে আশ্রয় নিচ্ছে।

স্থানীয়রা আরও জানান, এই অবস্থায় এখানে আবারও জরুরিভাবে ক্লোজার নির্মাণ করে নদী ভাঙন রোধ করতে হবে। তা না হলে বর্ষার সময় ভাঙন আরও বাড়তেই থাকবে। তাই এখানে পুনরায় রেগুলেটর তৈরি করে এই উপজেলার মানুষগুলোকে রক্ষা করা অতি জরুরি।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর ফরহাদ শামীম বলেন, গত বছর আকস্মিক বন্যায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নে অবস্থিত মুছাপুর ক্লোজারটি ভেঙে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে সাধারণ মানুষের ঘর-বাড়ি জায়গা জমি নদীর গর্ভে চলে যায়। ইতোমধ্যে ওই সমস্ত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এখানে জিও ব্যাগ ফেলানোর কাজ চলমান রয়েছে। অতি দ্রুত এখানে আবারও একটি ক্লোজার নির্মাণ করা হবে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হালিম সালেহী বলেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বর্ষা মৌসুমের পূর্বে অতি ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করে যেন কার্যক্রম গ্রহণ করা যায়, সেজন্য ডিজাইন টিম এসে ভিজিট করে গেছে।
মো. হালিম সালেহী আরও বলেন, অতি দ্রুত মুছাপুর ক্লোজার পুনরায় নির্মাণ করে আগের অবস্থানে ফিরে আনার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। সেই পর্যন্ত স্থানীয় সবার সহযোগিতা ও ধৈর্য ধারণ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।