ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে চায় জামায়াত

বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী দেশের সব ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে চায়। সব ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাশে থেকেই সারাদেশে শান্তি এবং সম্প্রীতি নিশ্চিত করে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষে কাজ করতে চায় বলে মন্তব্য করেন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) রাতে রাজধানীর কাকরাইলস্থ ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ভবনে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আয়োজিত ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত প্রীতি সমাবেশ নেতারা এসব কথা বলেন।
জামায়াত আমির বলেন, এই দেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। মুসলিম, অমুসলিম সবাই সবার ধর্মীয় অধিকার পালন করার সুযোগ পাবেন। আমরা এই সংগ্রাম করছি, চেষ্টা করছি একটি মানবিক কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে। যেখানে সবার যান-মাল, ইজ্জত, উপাসনালয় সবকিছুর নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে পারব।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সবসময়ই অমুসলিমদের কোন কিছু হলেই বাংলাদেশের একটা দল—আমরা তাদের নাম বলতে চাই না… পদত্যাগ করে পালিয়ে গেছেন তারা কিন্তু আঙ্গুলটা আমাদের দিকে ঘুরাইতেন। কিন্তু আমরা বলছি জামায়াত-শিবিরের কোনো লোক বাংলাদেশের কোনো একজন অমুসলিমের কাছে চাঁদা চাইতে গেছে এটা কেউ দেখাতে পারবে না।
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, আমরা সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে চাই, আধুনিক সুন্দর সমৃদ্ধ পূর্ণ ও সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গড়তে চাই। দেশ মানুষ দল-মত, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হিন্দু-মুসলিম বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সবাই মিলেই আমাদের এই প্রিয় দেশটাকে আমরা আগামী দিনে সুন্দরভাবে সাজাবো।
এ সময় জামায়াত ভিন্ন ধর্মালম্বীদের জামায়াতে ইসলামের ব্যানারে নির্বাচনের আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা জামায়াতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পরপরই আমাদের দুটি বড় উৎসব সামনে আসে, জন্মাষ্টমী এবং দুর্গাপূজা। ৫ থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত যখন সরকার ছিল না তখন জামায়াতে ইসলামের নেতাকর্মীরা আমাদের ধর্মীয় উপাসনালয় রক্ষার জন্য পাশে দাঁড়িয়েছে।
সন্তোষ শর্মা আরও বলেন, গর্বের সঙ্গে বলতে চাই—বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে ২০২৪ সালের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এবারের দুর্গাপূজায় সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে। যেখানে অন্যতম ভূমিকা পালন করেছে জামায়াত ইসলামী।
বৌদ্ধ ধর্মের অন্যতম ধর্মগুরু স্বরূপানন্দ ভিক্ষু বলেন, আমরা সব ধর্মের সবাই মিলে আগামী সুন্দর বাংলাদেশ গড়বো।
খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় নেতা পাস্টর তপন রোজারিও জামায়াতকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমাদের চার্চগুলো, মণ্ডপগুলো যেভাবে সুরক্ষা দিয়েছেন তার জন্য অবশ্যই আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। বাংলাদেশের সবার প্রতি ভালোবাসা, জামায়াতে ইসলামের প্রতি ভালোবাসা।
হিন্দু মহাজোট নেতা গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিক বলেন, আমরা সব সময় চাই আমাদের দেশ আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠুক। আমরা অ্যাসেম্বলিতে আমাদের প্রতিনিধি চাই, আমরা যেখানে আমাদের কথা বলতে পারব। জামায়াত ইসলামের কাছে আমরা এই আহ্বান জানাবো।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন—দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর সুকুমার বড়ুয়া, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ঘোষ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি দীনবন্ধু রায়, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের নেতা রিকন কোমল বড়ুয়া, সিদ্ধেশ্বরী সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি ও অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি নিভাষ চন্দ্র মাঝিসহ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ধর্মের বিভিন্ন নেতারা।