নৌকার ভাস্কর্য ভেঙে আ.লীগ ছাড়ার ঘোষণা সাবেক চেয়ারম্যানের

নিজের বাড়ির সামনের পুকুরঘাটে বানানো দলীয় প্রতীক নৌকার ভাস্কর্য ভেঙে আওয়ামী লীগ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার পিঞ্জুরী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ সিকদার। আজ রোববার (২৭ এপ্রিল) সকালে তিনি নিজ হাতে নৌকার ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপরই তাঁর নিজ নির্বাচনি এলাকা গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর আত্মগোপনে চলে যান। সম্প্রতি কিছু কিছু নেতাকর্মী বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে এলাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। এরই মাঝে জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জামিনে বেড়িয়ে এসেছেন কোটালীপাড়া উপজেলার পিঞ্জুরী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর ভাগনে আবু সাঈদ সিকদার।
এলাকায় এসেই আজ সকালে তার নিজ বাড়ির সামনের পুকুর ঘাটে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন নৌকার ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলেন। এ ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আওয়ামী লীগের দুর্গ খ্যাত এ উপজেলায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। তবে বিশ্বস্ত একটি সূত্রে জানা গেছে, নিজে দুর্নীতির মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে আবু সাঈদ সিকদার বিএনপিতে যোগ দেওয়ার পাঁয়তারা করছেন।
এ বিষয়ে আবু সাঈদ সিকদারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা আদর্শচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তাই তাঁর দল আর করবো না। সে আগামীতে দেশে ফিরে এলেও ওই দল আর করবো না। তাই নৌকার ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলেছি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে আবু সাঈদ সিকদার বলেন, কোন দল করবো সেটা এখনও ঠিক করিনি। তবে জীবনে আর আওয়ামী লীগ করবো না।
পিঞ্জুরী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা কাজী মুক্তা বলেন, আবু সাঈদ শিকদার দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে পিঞ্জুরী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তার আপন মামা প্রয়াত সাবেক ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। মামার প্রভাব খাটিয়ে পিঞ্জুরী ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। চেয়ারম্যান হওয়ার পর তিনি ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এখন আওয়ামী লীগের দুর্দিনে আবু সাঈদ সিকদারের এমন কাণ্ডে আমরা মর্মাহত! নৌকার এই ভাস্কর্য ভাঙার ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক রঞ্জন মল্লিক বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর আপন ভাগনে আবু সাঈদ সিকদার মামার নাম ভাঙিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তার এই অবৈধ অর্থ রক্ষার জন্য নৌকা ভেঙে ভোল পাল্টানোর চেষ্টা করছেন।
আবু সাঈদ সিকদারের বিএনপিতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এসএম মহিউদ্দিন বলেন, আবু সাঈদ সিকদারের বিএনপিতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে সে যদি আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে আসতে চায় তাহলে আমাদের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতা বলেন, পিঞ্জুরী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান আবু সাঈদ সিকদারের এই কাজটি করা মোটেও ঠিক হয়নি। তার কোনো সমস্যা থাকলে সিনিয়র নেতাদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল।
উল্লেখ্য, আবু সাঈদ সিকদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগে তদন্ত চলছে।