স্ত্রী ও তার পরকীয়া প্রেমিককে ফাঁসাতে আপন ভাইকে হত্যা

স্ত্রী ও তার পরকীয়া প্রেমিককে ফাঁসাতে আপন ভাইকে হত্যা করার ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে গোপালগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। হত্যার শিকার ভ্যানচালক ওয়েজ করোনী (৩১) হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা আপন ভাই জাহাঙ্গীর খান ও তার সহযোগী উজ্জ্বল শেখ গোপালগঞ্জ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। নিহত ওয়েজ করোনী খান সদর উপজেলার চরতলা গ্রামের মৃত ইসমাইল খানের ছেলে। ওয়েজ করোনী পেশায় একজন ভ্যানচালক ছিলেন।
রোববার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান আরও জানান, চরতলা গ্রামের নিহত ওয়েজ করোনীর ভাই জাহাঙ্গীর খানের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৩৩) নীলফামারীর জেলার রুবেল ইসলামের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। রুবেল ইসলাম ও ফাতেমার অশ্লীল (অন্তরঙ্গ) ভিডিও জাহাঙ্গীর ও নিকট আত্মীয়দেরকে দেখায় রুবেল। এক পর্যায়ে ফাতেমা জাহাঙ্গীরকে ডিভোর্স দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয় জাহাঙ্গীর খান। স্ত্রী ও পরকীয়া প্রেমিক রুবেলকে ফাঁসাতে তার আপন ভাই সহজ সরল ভ্যানচালক ওয়েজ করোনীকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় জাহাঙ্গীর এবং ফাতেমা বেগমের বাবার বাড়ির পাশে ওয়েজ করোনীর লাশ ফেলে রাখার পরিকল্পনা করে। জাহাঙ্গীর তার দুই সহযোগী উজ্জ্বল ও রুবেল সিকদারকে নিয়ে আপন ভাই ওয়েজ করোনীকে হত্যার পরিকল্পনা করে এবং ২০২৪ সালের ২৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীর কৌশলে তার ভাই ওয়েজ করোনীকে নিয়ে ভ্যানযোগে গোপালগঞ্জের চাপাইল ব্রিজের পাশে পোদ্দারের চর এলাকায় নিয়ে যায়। এর কিছু সময় পর জাহাঙ্গীরের দুই সহযোগী উজ্জ্বল ও রুবেল সিকদার ওই চরে আসে। এ সময় জাহাঙ্গীর তার ভাই ওয়েজ করোনীর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। পরে উজ্জ্বল ও রুবেল সিকদার দুহাত ও পা ধরে রাখে। তখন জাহাঙ্গীর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শাসরোধ করে ওয়েজ করোনীর মৃত্যু নিশ্চিত করে পার্শ্ববর্তী কচুরিপানার ডোবায় ফেলে রেখে যায়। পরে তার ভ্যানটি সদর উপজেলার কেকানিয়া গ্রামের জনৈক মিরাজের কাছে ২০ হাজার টাকা বিক্রি করে টাকা তিনজনে ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। হত্যাকাণ্ডের সময় বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে নিহত ওয়েজ করোনীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে জাহাঙ্গীরের স্ত্রী ফাতেমা ও তার প্রেমিক রুবেল ইসলামের মোবাইলে ফোন দেয়। এ ঘটনার পরের দিন ২৭ নভেম্বর গোপালগঞ্জ থানায় জাহাঙ্গীর একটি নিখোঁজের জিডি করে। পরে নিখোঁজ হবার বিষয়টি মাইকিং করা সহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজির নাটক করতে থাকে জাহাঙ্গীর। ২৮ নভেম্বর স্ত্রী ফাতেমা বেগম, ফাতেমার বাবা ইসমাইল শেখ, শ্যালক সিরাজ শেখ ও ফাতেমার প্রেমিক রুবেল ইসলাম (৩৩) কে আসামি করে গোপালগঞ্জ আদালতে একটি অপহরণ মামলা করেন জাহাঙ্গীর। পরে ৫ ডিসেম্বর পোদ্দারের চর ডোবায় ওয়েজ করোনীর লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় গোপালগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল্লাহ আল মামুন মামলাটির তদন্ত করে হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে ব্যর্থ হলে মামলাটির তদন্তভার ৬ ফেব্রুয়ারি গোপালগঞ্জ ডিবি পুলিশের ওপর ন্যস্ত করা হয়। পরে ডিবির এসআই খান মোহাম্মদ জোবায়ের মামলাটির তদন্ত শুরু করেন। বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করেও হত্যার কোন রহস্য উদঘাটন করতে না পেরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মামলার বাদী নিহতের ভাই জাহাঙ্গীর ও তার অপর সহযোগী উজ্জ্বল শেখকে ২০ এপ্রিল গ্রেপ্তার করে।
জিজ্ঞাসাবাদে একপর্যায়ে তারা হত্যাকাণ্ডের সাথে তিনজন জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে গোপালগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অনুশ্রী রায়ের আদালতে গত ২১ এপ্রিল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে।
প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবু সালেহ মো. আনছার উদ্দিন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই খান মোহাম্মদ জোবায়েরসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মী উপস্থিত ছিলেন।