লালপুরে ৩১৫ কোটি টাকার কোরবানির পশু প্রস্তুত

আসন্ন ঈদুল আজহা সামনে রেখে নাটোরের লালপুর উপজেলায় কোরবানির জন্য প্রায় ৭৬ হাজার গবাদিপশু প্রস্তুত করা হয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব পশু দেশের বিভিন্ন জেলার হাটে সরবরাহ করা হবে বলে প্রত্যাশা করছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ, যা থেকে প্রায় ৩১৫ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবছর কোরবানির জন্য মোট ৭৬ হাজার ১৭৬টি পশু প্রস্তুত করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ১১ হাজার ৬৩৭টি ষাঁড়, ৪ হাজার ৭৫৫টি বলদ, ১ হাজার ৯২২টি গাভি, ৫ হাজার ৫৬০টি মহিষ, ৪৬ হাজার ছাগল ও ৬ হাজার ২৬৪টি ভেড়া। লালপুরে স্থানীয় কোরবানির পশুর চাহিদা প্রায় ৪১ হাজার। ফলে ৩৫ হাজার পশু উদ্বৃত্ত থাকছে যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাহিদা পূরণে সহায়তা করবে।
খামারিরা জানান, তাদের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে থাকলেও পশু খাদ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ কয়েকগুণ বেড়েছে। এতে পশুর ন্যায্য দাম না পেলে লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
উপজেলার বিভিন্ন খামার ঘুরে দেখা গেছে, খামারিরা গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়াকে প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করছেন। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ থেকে পশুদের বাঁচাতে ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে অনেক খামারে মোটর দিয়ে পানি সেচ করে পশুদের গোসল করানো হচ্ছে।
সন্তোষপুর গ্রামের খামারি মুর্শিদা খাতুন বলেন, ‘আমার খামারে এবার ৮টি গরু প্রস্তুত করেছি। সবগুলোই প্রাকৃতিক খাদ্য ও পরিচর্যায় বড় করেছি। গরমে অনেক কষ্ট হচ্ছে, তবে পশুগুলোর পরিচর্যায় কোনো ত্রুটি রাখছি না। শুধু চাই হাটে যেন মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য না থাকে।’
কেশবপুর গ্রামের আরেক খামারি হেলাল হোসেন বলেন, ‘ঘাস, খৈল, ভুসি, খড় সবকিছুর দাম বেড়েছে। আগে গরুর পেছনে যা খরচ হতো, এখন দ্বিগুণ লেগে যাচ্ছে। বাজারে দাম না থাকলে লোকসান ছাড়া কিছু থাকবে না। তবুও আশায় আছি সরকার যদি সঠিক নজরদারি রাখে, তাহলে আমাদের মতো খামারিরা লাভবান হবে।’
লালপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ জানান, ‘এ বছর প্রায় ৪০০ কোটি টাকার পশু প্রস্তুত রয়েছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন হাটে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার পশু বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই পশুগুলো বিক্রি করে প্রায় ৩১৫ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আরও বলেন, ‘খামারিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। রাসায়নিক বা ইনজেকশন ব্যবহার প্রতিরোধে কঠোর নজরদারি চলছে। পশুর হাটগুলোতে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও মনিটরিং টিম কাজ করবে।’