রাজনীতির মাঠে নিষ্ক্রিয় হলেও ভালোবাসায় অটল পটুয়াখালীর কৃষক সোহাগ মৃধা। নিজের সারা জীবনের সঞ্চয় ও শ্রম দিয়ে বড় করেছেন একটি ষাঁড়। যাকে পরিবারের সন্তানের মতো লালন-পালন করেছেন। ষাঁড়টিকে উপহার দিতে চান তার রাজনৈতিক প্রেরণার উৎস, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে।

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার উত্তর ঝাটিবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা সোহাগ মৃধার ষাঁড়টির নাম ‘কালো মানিক’। লম্বায় ১০ ফুট, উচ্চতায় ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি আর ওজন প্রায় এক হাজার ৪০০ কেজি। কুচকুচে কালো রঙের ফ্রিজিয়ান জাতের এই ষাঁড়টি এখন তার পরিবারের সদস্যের মতোই। গ্রামের মানুষও ষাঁড়টিকে ‘কালো মানিক’ নামেই চেনে।

সোহাগ জানান, ২০১৮ সালের শেষের দিকে স্থানীয় চৈতা বাজার থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার টাকায় একটি গাভি কিনেছিলেন তিনি। গাভিটি অল্প সময়ের মধ্যেই একটি বাছুর প্রসব করে। পরে গাভিটি বিক্রি করে বাছুরটিকে রেখে দেন। সেই বাছুরই এখন ‘কালো মানিক’।

জানা গেছে, ২০২৩ সালে গণমাধ্যমে একটি সংবাদ দেখে মনে জোর পান সোহাগ। সেখানে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এক কৃষকের গরু উপহার নেওয়ার খবর ছিল। সেখান থেকেই তার ইচ্ছা জাগে খালেদা জিয়াকে তার শখের ষাঁড়টি উপহার দেবেন।

সোহাগ বলেন, ‘আমার বাবা বিএনপির রাজনীতি করতেন। আমি ছোটবেলা থেকেই বিএনপিকে ভালোবাসি। আমি ভাইরাল হতে চাই না, লাভের আশাও নেই। আবেগ থেকেই প্রিয় নেত্রীকে আমার প্রিয় কালো মানিককে উপহার দিতে চাই।’

তবে খালেদা জিয়া আদৌ এই উপহারটি গ্রহণ করবেন কি না—তা জানেন না সোহাগ। তবুও প্রস্তুতির কোনো কমতি রাখছেন না তিনি। ইতোমধ্যে ৬০ হাজার টাকায় দুটি মিনি ট্রাক ভাড়া করা হয়েছে ষাঁড় পরিবহণের জন্য। সাজানো হয়েছে বাদক দল। তৈরি করা হয়েছে বিশেষ গেঞ্জি—যারা ঢাকায় যাবেন, তাদের জন্য। সঙ্গে থাকবে ব্যানার ও ধানের শীষ প্রতীক।

সোহাগের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কালো মানিককে একনজর দেখতে দূর থেকে মানুষ এসে ভিড় করছেন। মোবাইলে ছবি তোলা, ভিডিও করা—সবই চলছে। শিশুরা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে কালো মানিকের দিকে।

সোহাগের মা হাজেরা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের শখ অনেক দিন ধরেই। ছোটবেলা থেকেই বিএনপি ভালোবাসে। আমাদের সংসারে অভাব আছে, স্বামী নেই, সামান্য জমিতে চাষাবাদ করে দিন চলে যায়। কিন্তু এই ষাঁড়টি সে এতদিন ধরে যেমন যত্নে রেখেছে, তেমন করে মানুষের দেখাও দিয়েছে।’

আমড়াগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সোহাগ আমাদের দলের একজন একনিষ্ঠ কর্মী। ষাঁড়টি নেত্রীকে উপহার দেওয়ার কথা যখন বলেছিল, প্রথমে বিশ্বাসই করিনি। কিন্তু ও নাছোড়বান্দা। এখন দেখি, প্রস্তুতি প্রায় শেষ। কিছুদিনের মধ্যেই রওনা দেবে।’ তিনি আরও জানান, ষাঁড়টির গায়ে ধানের শীষ আঁকা ব্যানার থাকবে। নেত্রীর নামে শুভেচ্ছাবার্তা নিয়ে ঢাকা পৌঁছানো হবে। যাত্রার সময় থাকবে প্রচার মাইকও।