‘ছয় গাড়ি লোক হাত-চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে গেছে’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ ‘নিখোঁজ’ হওয়ার ঘটনায় তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমেদের সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নেয়নি পুলিশ।
স্বামীর সন্ধান চেয়ে জিডি করতে গতকাল বুধবার রাতে প্রথমে রাজধানীর গুলশান থানায় যান সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমেদ। সেখানে জিডি করতে না পেরে যান উত্তরা পশ্চিম থানায়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই থানা থেকে বের হয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘উনারা (পুলিশ) বলতেছে, কোনো রিজনেবল গ্রাউন্ড (যৌক্তিক প্রেক্ষাপট) ছাড়া জিডি নিতে পারবেন না। এটা কোনো কথা হইল নাকি? আমি উনার স্ত্রী। স্বামীর সন্ধানে সারা দিন পাগলের মতো এখানে-ওখানে ঘুরতেছি। আর উনারা আমাকে এইটুকু হেল্প করবে না। উনারা আমার একটা জিডি নেবে না।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হাসিনা আহমেদ আরো বলেন, ‘কোন দেশে বসবাস করছি, যেখানে একটা মানুষ গত রাত (মঙ্গলবার রাত) থেকে মিসিং (নিখোঁজ)। তাঁকে কীভাবে, কারা নিয়ে গেছে, তুলে নিয়ে গেছে—এটা আমি সমগ্র জাতির কাছে আপনাদের মাধ্যমে বলতে চাই।’
মঙ্গলবার রাতের ঘটনা প্রসঙ্গে হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘তাঁকে (সালাহ উদ্দিন) গত রাত ১০টার সময় ছয় গাড়ি লোক ওইখানে যায়, উত্তরার বাসায় যেখানে উনি ছিলেন। ওই বাসায় ঢুকে সিকিউরিটি গার্ডকে উনারা ডিবির (পুলিশের গোয়েন্দা শাখা) পরিচয় দেন এবং উনাদের কার্ড দেখান। ডিবির পরিচয় দিয়ে উনারা উপরের তলায় উঠে যান, যেখানে উনি ছিলেন। সেখানে গিয়ে উনার দরজা ধাক্কায়ে মোটামুটি ভেঙে ফেলে ভেতরে ঢুকে যান। ঠিক সেই মুহূর্তে উনি আমাকে কল দেন। কল দিয়ে জানান যে আমাকে এ রকম আটক করার চেষ্টা করতেছে। এ মুহূর্তেই লাইনটা ওরা কেটে ফেলে।
কেটে ফেলার পর আমি আর উনাকে ট্রেস করতে পারি নাই।’
হাসিনা আহমেদ আরো বলেন, ‘আমি বহুবার চেষ্টা করেছি উনার সাথে যোগাযোগ করার। পাই নাই। বাড়ির মালিকের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলাম। বাড়ির মালিককে আমি ধরতে পারলাম এবং বাড়ির মালিকের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম যে উনাকে (সালাহ উদ্দিন আহমেদ) এভাবে উনারা হাত বেঁধে, চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে গেছে, ছয় গাড়ি লোকজন।’
জিডি না নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি তাঁকে (হাসিনা আহমেদ) নৈতিক কোয়েশ্চেনটা (প্রশ্ন) করেছিলাম। জিডি করেন, মামলা করেন, যা হওয়ার সব এ থানায় হবে। কোনো আপত্তি নাই। যদি সেখানে এ ঘটনা ঘটে থাকে। তো, আপনি কি এই বাসায় ছিলেন কি না। উনি উত্তরে বলছেন, না, আমি এই বাসায় ছিলাম না।
তাহলে আপনি কী করে জানলেন? তিনি বলেন যে ওই বাসার দারোয়ান বলছে, ওই বাসার লোক বলছে। অনুগ্রহপূর্বক ওই বাসার দারোয়ান বা ওই লোককে বলেন। একটা ঘটনার অথেনটিসিটি (বিশ্বাসযোগ্যতা) যাচাইয়ের দরকার আছে। কারণ, ওই ব্যক্তি তো সমাজের আরেকজন সাধারণ নাগরিকের মতো নয়। তিনি একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন আছে যে তিনি ওখানে আদৌ ছিলেন কি না বা আদৌ এ রকম কোনো ঘটনা ঘটছে কি না।’
এর আগে গত বুধবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, ‘মঙ্গলবার রাত ১০টার পর পুলিশ, ডিবি, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২০-২৫ জনের একটি দল বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমেদকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। একই সঙ্গে বাসার একজন পুরুষ ও একজন নারীকর্মীকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
এর পর থেকে পরিবারের সদস্য ও রাজনৈতিক সহকর্মীদের সঙ্গে সালাহ উদ্দিন আহমেদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, এখন পর্যন্ত তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়নি, এমনকি গ্রেপ্তারের কথাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে প্রকাশ করা হয়নি।
এতে তাঁর পরিবার ও রাজনৈতিক সহকর্মীরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন বলে জানান নজরুল ইসলাম খান।
তবে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই।’
ডিএমপির উপকমিশনার মাসুদুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা নেই।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ গ্রেপ্তারের পর থেকে সালাহ উদ্দিন আহমেদ দলের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠাচ্ছিলেন।