‘নিয়ন্ত্রণের’ পরও পেঁয়াজের কেজি ২০০ টাকা!
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2019/11/14/p_2.jpg)
শিল্পমন্ত্রীর পক্ষ থেকে লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে ছুটে চলা পেঁয়াজের বাজার ‘নিয়ন্ত্রণে’ থাকার কথা বলা হলেও আপামর জনসাধারণকে এই সবজি এখন কিনতে হচ্ছে রেকর্ড মূল্য প্রায় ২০০ টাকা কেজি।
স্বাভাবিক সময়ে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরের এই পেঁয়াজের মূল্য কেন এই সময়ে এসে বাড়তে বাড়তে ডবল সেঞ্চুরিতে ঠেকল- এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা উভয়েই হতাশা ব্যক্ত করেছেন। আর ক্রেতার চোখে-মুখে দেখা গেছে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারের পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে। পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ প্রতি পাল্লা (পাঁচ কেজি) ৯৭০ থেকে এক হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর এর পাশের খুচরা বাজারে সেই পোঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২০৫ টাকা কেজি দরে।
একই বাজারে মিসর থেকে আমদানি করা প্রতি পাল্লা পেঁয়াজ ৭৫০ থেকে ৭৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা খুচরা বাজারে পাওয়া যাচ্ছে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি। এর বাইরে বাজারে মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজও রয়েছে। এর দাম মিসরের পেঁয়াজের চেয়ে একটু বেশি। সেটি ১৬০ টাকা থেকে ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চায়না থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ এখন বাজারে নেই বলে জানিয়েছেন পাইকারি বিক্রেতারা।
পেঁয়াজের বাজারের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে গত মঙ্গলবার সংসদে এক সংসদ সদস্যের প্রশ্নের জবাবে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ূন বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া পেঁয়াজের বাজার এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আকস্মিক বন্যার কারণে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় আমাদের পেঁয়াজের বাজার গরম হয়ে ওঠে। তবে আমরা পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছি। বর্তমানে আমরা মিয়ানমার ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছি।’
এদিন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির অনুপস্থিতি শিল্পমন্ত্রী সংসদে এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন। এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘এই মৌসুমে পেঁয়াজ কম উৎপন্ন হয় ও এই সময়ে সাধারণত সংকট থাকে। তবে কয়েক দিনের মধ্যে আমাদের বাজারে দেশি পেঁয়াজ চলে আসবে।’
শিল্পমন্ত্রীর এই বক্তব্যের দুদিন পর আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কারওয়ানবাজারে পেঁয়াজ কিনতে এসে গৃহবধূ রোজিনা আক্তার (৩৫) দেখেন, পেঁয়াজের দাম কমেনি তো বটেই বরং সেটি আরো বেড়েছে। ক্ষোভে-দুঃখে রোজিনা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম যেভাবে বেড়ে চলছে তাতে তো মনে হচ্ছে পেঁয়াজ খাওয়াই ছেড়ে দিতে হবে।’
মশিউর রহমান নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘পেঁয়াজ বাজারে সরকারের নিয়মিত মনিটরিং করা দরকার। না হলে এই দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।’
বিক্রেতাদের দাবি, বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলেই বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন তাঁরা। সুমিল নামের একজন পাইকারি বিক্রেতা বলেন, ‘পেঁয়াজের আমদানি কম চাহিদা বেশি, প্রতিদিন চাহিদা যদি হয় ২০ ট্রাক, পাই হলো এক-দুই ট্রাক, তাহলে কেমনে হবে বলেন।’
দুপুরের দিকে সাধারণত পাইকারি বাজারে লোকজনের আনাগোনা কম থাকে। কিন্তু আজকে অন্যদিনের চেয়ে আরো বেশি নীরব ছিল। বিক্রেতাদের অধিকাংশই দোকানের মধ্যে বসে ঘুমাচ্ছিলেন বা গল্প করছিলেন। কোনো কোনো দোকানের বৈদ্যুতিক ভাল্ব আর পাখা দুটোই বন্ধ। বেচাকেনা ভালো না বলেও জানান তাঁরা।
কয়েকজন পাইকারি বিক্রেতা হতাশা ব্যক্ত করেন বলেন, যেভাবে বাজার চলছে তাতে ঘর-দোকান-কর্মচারীর খরচ উঠানোই কষ্টকর হয়ে পড়ছে। সংসার চালানো তো পরের কথা। পেঁয়াজের বাজারের এই ‘নৈরাজ্য’ দ্রুত বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বিক্রেতারা।