মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাই আগামী বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ
সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির বাস্তবতা মোকাবেলা করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাই আগামী বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিরা। আজ শনিবার রাতে দর্শকনন্দিত বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই-এর যৌথ উদ্যোগে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘কেমন বাজেট চাই’ অনুষ্ঠানে বক্তারা এ মত দেন।
প্রবৃদ্ধির সঙ্গে কর্মসংস্থান বাড়াতে আসছে বাজেটে নজর দেওয়ার তাগিদ দেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তারা।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘দারিদ্র্য কমিয়ে এনে উন্নয়নকে টেকসই করতে বাজেটকে জনবান্ধব করাই সরকারের মূল লক্ষ্য। স্বাস্থ্য খাতে আমাদের অনেক অর্জন রয়েছে। আগামীদিনে এ অর্জন ধরে রাখতে হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব যেটা আসছে সেটির সঙ্গে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে যুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি আইসিটি খাতে আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের তরুণরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। অনেকে ঘরে বসেও আয় করছে। এ খাতটিকে আমাদের শক্তিশালী করতে হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনে আমরা বিজয়ী হয়ে পরপর তিনবার আমরা ক্ষমতায় আছি। আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ছিল আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন হবো এবং আমাদের জনশক্তিকে দক্ষ ও যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলবো। আগামী বাজেটে আমাদের এ বিষয়ে আরও জোর দিতে হবে।’
সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে এম এ মান্নান বলেন, ‘বর্তমানে দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। এটা টেকসই করা আমাদের সকলেরই দায়িত্ব।’
কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘সারা বিশ্বের ৪০ ভাগ খাদ্য উৎপাদনকারী দেশ ইউক্রেন। কিন্তু চলমান যুদ্ধের কারণে গম, ভুট্টা উৎপাদন করা যাচ্ছে না। সেখানে কৃষকরা ফসল ফলাতে পারছে না। সেজন্য আগামী ছয় মাস পর দেশের খাদ্য নিয়ে আমরা চিন্তায় রয়েছি। আমরা বিগত বাজেটগুলো দেওয়ার পর আমাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পেরেছি। আমরা পরিকল্পনামতো বাস্তবায়ন করেছি।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি সারা বিশ্বের মতো আমাদের ভুগিয়েছে। তবু অনেক দেশের চেয়ে বিশেষ করে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ অর্থনীতি সবচেয়ে ভাল অবস্থানে ছিল। কিন্তু চলতি বছর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ সারা বিশ্বের মতো আমাদের চিন্তায় ফেলেছে। কেননা সারা বিশ্বের ৪০ ভাগ খাদ্য ইউক্রেন সরবরাহ করে থাকে। সেখানে যুদ্ধের কারণে গম, ভুট্টা উৎপাদন করা যাচ্ছে না। সেখানে কৃষকরা ফসল ফলাতে পারছে না। আগামী ছয় মাস পর দেশের খাদ্য নিয়ে আমরা চিন্তা করছি। এরই মধ্যে ভোজ্যতেল নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। আগামী ছয়মাস পর বিনিয়োগ ব্যবস্থা কী হবে। আমরা গত ১১ বছর ধরে ভর্তুকি দিয়ে আসছি। তন্মধ্যে দেখা গেছে, এ বছর বাজেটে ৩০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অর্থনীতির সফলতা এসেছে।’
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির প্রথম নির্বাহী পরিচালক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘বাংলাদেশের যুব সমাজ চারজনে একজন বেকার এবং শিক্ষিত যুবক তিনজনের মধ্যে একজন বেকার। এছাড়া, যে যত শিক্ষিত সে তত বেকার।’
ড. দেবপ্রিয় আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ অনেক স্থিতিশীল দেশ, আবার অনেক দেশ স্টেবল না থাকলে তিনমাসের মধ্যে অস্থিতিশীল হয়ে যায়। শ্রীলঙ্কা এখন রাজনৈতিক অস্থিতিশীল হয়ে গেছে। টাকার সাথে যদি ৭ থেকে ৯ ও ১০ পার্থক্য হয়ে যায় এবং বাঁধ ভেঙে যদি ১৩০ চলে যায়। তখন অস্থিতিশীল হয়ে যেতে পারে। আমরা অক্টোবর থেকে বলেছি দেশে রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। তখন কোন কার্যক্রম নেওয়া হয়নি।’
ড. দেবপ্রিয় আরও বলেন, ‘সরকারের সবচেয়ে বড় অবদান অর্থনীতির স্থিতিশীলতা। যতি এই স্থিতিশীলতা না থাকে তাহলে আর কিছুই থাকবে না। এই বাজেট অনেক বড় বাজেট। আমি বলি এটা ফিসক্যাল ইউলেশন। যে বাজেট ঘোষণা করা হয়, তা সংশোধনের সময় ২০ শতাংশ কেটে দেওয়া হয়। এছাড়া, বাংলাদেশ সাড়ে ১৬ কোটির দেশ। ৭৪ লাখ লোকের ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) রয়েছে। আর ট্যাক্স দেয় শুধু ৩০ লাখ মানুষ। মানুষ ট্যাক্স দেয় না কেন? বাংলাদেশকে সুরক্ষার কথা বলছেন ? সুরক্ষার কর্মসূচি যখন চালু হয়, তখন ১০০ টাকায় শুরু করা হয়েছিল আর এখন ৫০০ টাকা। কর্মসংস্থানের কথা বললে, বাংলাদেশের যুব সমাজ চারজনে একজন বেকার। শিক্ষিত যুবক তিনজন একজন বেকার। যে যত শিক্ষিত সে তত বেকার।’
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেছেন, ‘বলা হচ্ছে বেকারত্ব বেড়েছে। কিন্তু গার্মেন্টস বা কারখানা পরিদর্শনে গেলে দেখা যায় লোক পাওয়া যাচ্ছে না। করোনার পর রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধটা আমাদের সমস্যায় ফেলেছে। তবে আগামী বাজেটে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করাসহ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।’
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় অর্থনীতি সুদৃঢ় হয়েছে। করোনার মধ্যে ও ৬ দশমিকের ওপরে। মাথাপিছু আয়, বৈদেশিক আয় ও রিজার্ভ বেড়েছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী ও সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে করোনার পর রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধটা আমাদের সমস্যায় ফেলেছে। সামনের বাজেট আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হবে। গত কয়েক বছরে আমাদের প্রাইভেট সেক্টরে হয়তো ইনভেস্টমেন্ট ছিল না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ২২ সালকে নির্মাণসামগ্রীর বছর ঘোষণা করেছেন। সম্প্রতি আমেরিকার একটি প্রতিনিধিরা এসেছেন তারা এখানে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছেন। দেশে একদিকে বলা হচ্ছে বেকারত্ব বেড়েছে কিন্তু গার্মেন্টসগুলোতে গেলে দেখি ওয়ার্কার পাওয়া যাচ্ছে না। তাই স্কিল বাড়াতে হবে। দেশের জনশক্তিকে কাজে লাগাতে হলে তাদের স্কিল তৈরি করতে হবে।’
সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘দেশের ৮০ ভাগই সাধারণ মানুষ। তাদের জন্যই বাজেট কেমন করা হবে, সেটা ভাবা উচিত। আসলে পার্লামেন্টে টার্ম আছে, তা সাপ্লিমেন্টারি। এখানে কার জন্য বাজেট, সেটা যদি স্পষ্ট না করি; তাহলে কেমন বাজেট চাই, তা অর্থপূর্ণ হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিত হোক আর অশিক্ষিত হোক, সবার মধ্যে আগ্রহ থাকে কেমন বাজেট হবে।’
ড. মঈন বলেন, ‘বাজেটের সময় এলে সবাই উৎসুক থাকে। ধনীরা জানতে চায় মার্চেটিজ গাড়ির ট্যাক্স বাড়বে কি না। আর যারা গ্রামে থাকে তারা জানতে চায় পেঁয়াজ ও নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে কি না? আমাদের সবার জন্য বাজেট করতে হবে। এই দেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে, মধ্যম আয় ৮০ ভাগ অন্যদিকে উচ্চবিত্ত শতকার ৫ থেকে ১০ ভাগ। আমাদের ৮০ ভাগ সাধারণ জনগণের চিন্তা করতে হবে। তাদের জন্য কেমন বাজেট হবে, সেটা মুখ্য বিষয়।’
ড. মঈন আরও বলেন, ‘সাধারণ মানুষের জন্য বাজেট যেন জুলুম না হয়। ব্যবসায়ী যারা আছে এবং উৎপাদন যারা করছেন, তাদেরকেই শুধু বলবো না, আপনারা শুধু ট্যাক্স দেন। বাজেট একটি ব্যালেন্সিং বিষয়।’
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেছেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বে একটা ধাক্কা গেছে। তবু গত দশ বছরে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল থাকায় আমাদের উৎপাদন ও রপ্তানি বেড়েছে। নিরাপত্তা সংকট না থাকায় পোশাকখাতে বায়াররাও আসছে, আমাদের অর্ডার বেড়েছে। আশা করছি আগামী দুই মাসের মধ্যে বিগত বছরের টার্গেট ৭০ ভাগ রপ্তানিতে পৌঁছাতে পারবো।’
মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘আমাদের এশিয়ায় পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভারতসহ সকল দেশে করোনা ও রাজনৈতিক সমস্যায় রপ্তানিতে সমস্যায় পড়েছে। কিন্তু গত এক দশক আমাদের দেশ সেফ কান্ট্রি হওয়ায় বায়ররা আসছে। সেজন্য সরকারকে আমরা ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পোশাকখাতে রপ্তানির ক্ষেত্রে আংশিক সমস্যা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে দুটি সমস্যা রয়েছে তাহলো- গ্যাস সমস্যা ও সরকারের পলিসি না জানা। কেননা গ্যাস সংকটের কারণে আমাদের উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। তখন বায়ারদের সময়মতো সরবরাহ দিতে না পারলে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়।’
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম বলেন, ‘কোভিডের পরে এই বাজেটটি জাতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোভিড মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে। তিনি ব্যবসায়ীদের জন্য যে প্রণোদনা দিয়েছেন, তাতে ব্যবসায়ীরা লাভবান হয়েছেন। তাঁর জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
মো. মাহবুবুল আলম বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতকে যেন আমরা না ভুলি। আবারও যদি এরকম পরিস্থিতি তৈরি হয় তাহলে আমরা কী করব। এজন্য আমাদের জেলা ও বিভাগীয় হাসপাতালগুলোকে যদি আধুনিকায়ন করতে পারি, তাহলে আবারও এমন কিছু হলে আমরা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারব।’
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সদস্য এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সরকারের কাছে আমরা অনেক কিছু পেয়েছি, করপোরেট ট্যাক্স ও ব্যাংকিংয়ের ট্যাক্স রেট কমানোর কথা বলেছিলাম। আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই, সরকার সেসব কথা শুনেছে। একটি বিষয় হচ্ছে, ব্যাংকের ট্যাক্স রেট অনেক বেশি। এমনকি অনাদায়ী ঋণেও আমাদের সেই একই ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ ট্যাক্স আমাদের দিতে হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রীকে বলতে চাই, এই জায়গাটিতে যদি কিছু করা যায়। অনাদায়ী ঋণ আদায় হয়ে গেলে আমরা ট্যাক্স দিব। কিন্তু এখানে লাভ পাচ্ছি না, তাও ট্যাক্স দিতে হচ্ছে।’
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বলেন, ‘আমাদের করপোরেট ট্যাক্সে যে লিস্টেড আর নন লিস্টেডের ফারাক আছে সেটা খুব কম, সাড়ে ৭ শতাংশ। বাংলাদেশে অনেক বহুজাতিক কোম্পানি আছে, এই ফারাকটা বাড়িয়ে দিতে পারলে তারা লিস্টেড হতে আগ্রহী হবে। আমি প্রস্তাব করি, ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ যদি লিস্টেড কোম্পানির ট্যাক্স ধরা হয় তাহলে খুব উপকার হবে।’
এমএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান বলেন, ‘এসএমই খাতের ট্যাক্স রেটটা কমানো জরুরি, সেটা আমরা সবাই জানি। দেখুন, জাপানের অর্থনীতির ৯৩ শতাংশ নির্ভর করে এসএমই খাতের ওপর। বাংলাদেশে আমরা করি ২০ বা ২৫ শতাংশ। শিল্প খাত করে ৩৬ শতাংশ। এখানে ৮৫ শতাংশেরও বেশি কর্মসংস্থান আবার এসএমই খাতের। এই এসএমই খাতের লোকজনকে বিশেষ সুবিধা যদি আমরা বাঁচিয়ে না রাখি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ২০৪১ সালের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছেন তা অর্জন করা কঠিন হবে।’
ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতি ও এফবিসিসিআই’র পরিচালক শমী কায়সার বলেছেন, পুরো ই-কমার্স খাতে যে কয়েকটি কোম্পানি দুর্নীতি করেছে তারা দুই শতাংশেরও কম। কিন্তু করোনাকালে আমরা দেখেছি, কোভিডকালে পুরো ই-কমার্স খাতে প্রায় দুই লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং ফেসবুকের মাধ্যমে প্রায় চার লাখ উদ্যোক্তা কাজ করছেন, তার বেশিরভাগই নারী।’
শমী কায়সার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এই বছরটাকে অবকাঠামো উন্নয়নে বছর হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এর একটা বড় অংশই হচ্ছে, তথ্য ও প্রযুক্তি।’
আমি নারী উদ্যোক্তাদের বিষয়ে বলতে চাই, আমরা দেখেছি, কোভিডকালে পুরো ই-কমার্স খাতে প্রায় দুই লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং ফেসবুকের মাধ্যমে প্রায় চার লাখ উদ্যোক্তা কাজ করছেন, তার বেশিরভাগই নারী। কিন্তু পুরো ই-কমার্স খাতে যে কয়েকটি কোম্পানি দুর্নীতি করেছে তারা দুই শতাংশেরও কম বলে উল্লেখ করেন শমী কায়সার।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ধন্যবাদ দিয়ে শমী কায়সার বলেন, ‘গত বছর করপোরেট ট্যাক্সের আওতায় আনতে চেয়েছিল এনবিআর। কিন্তু পরে উৎসে করের আওতায় আনা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছিল, এক কোটি টাকার বাইরে যারা তারা এই উৎস করের বাইরে। আমাদের অনুরোধ, এই খাতটি মাত্র তৈরি হয়েছে, প্রায় ৯০ শতাংশই হচ্ছে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা এবং নারী উদ্যোক্তা। এই উৎসে করটি অন্তত তিন বছরের জন্য মওকুফ করা অথবা এক কোটির স্লাবটি আরও বাড়ানো উচিত। অন্তত এক কোটির জায়গায় দুই কোটি করা উচিত।’
বাংলাদেশ-চীন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির যুগ্ম মহাসচিব আল মামুন মৃধা বলেন, ‘বাংলাদেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্য খুব বেশি নেই। বরাবরই আমরা বলেছি, উচ্চপ্রযুক্তি সম্পন্ন যেসব পণ্য আছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন সেটিকে সামনে রেখে উচ্চপ্রযুক্তি সম্পন্ন যেসব পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে আমরা কর অবকাশের সুযোগ যদি আরেকটু বেশি মাত্রায় পাই। বড় রকমের বিনিয়োগ এই সেক্টরে পাওয়া যেতে পারে।’
আল মামুন মৃধা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে স্মার্টফোন তৈরি হয়ে মেইড ইন বাংলাদেশ লেবেলে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। একইভাবে বৈদুত্যিক গাড়িতেও আমরা সম্ভাবনা দেখি। এর সঙ্গে বৈদ্যুতিক আরও অন্য সরঞ্জামেও সম্ভাবনা রয়েছে। এসব খাত নিয়ে কর্মপরিকল্পনা নিলে সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের বিনিয়োগ আসতে পারে আমাদের দেশে।’
সেন্টার ফর নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশির চেয়ারম্যান সেকিল চৌধুরী বলেন, ‘প্রায় ১৭ কোটি মানুষের দেশে প্রায় দেড় কোটি মানুষ দেশের বাইরে থাকে। তারা প্রায় ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রতি বছর দেশে পাঠান। কিন্তু এদেরকে তৃণমূল পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সংযুক্ত করা হয় না। মাননীয় অর্থমন্ত্রী পরশু বলেছেন, তাঁর উপরে ভরসা রাখতে। তিনি যতদিন আছেন, প্রবাসীদের সমস্যা নাই। তিনি গভীরভাবে বাজারের বিষয় নিয়ে মগ্ন আছেন। তাঁর দুজন সহকর্মী এখানে আছেন, তাঁরা যদি আমাদের প্রবাসীদের বিষয়ে কিছু কথা অর্থমন্ত্রীকে বলেন। রেমিট্যান্স ফোর্স ঠিক রাখতে হলে প্রবাসীদেরকে সংযুক্ত রাখতে হবে। তাদেরকে নীতি নির্ধারণেও কিছুটা কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। তবেই কেবল এই দেড় কোটি মানুষ দেশের সঠিক সম্পদ হিসেবে দেখা দেবে।’