মীরসরাইয়ে থাই কোম্পানির বিনিয়োগ
দেশের বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ করা হচ্ছে চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে। প্রায় ১০ হাজার একর জায়গায় গড়ে তোলা হচ্ছে অঞ্চলটি। একই সঙ্গে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় চলছে আরো দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নকাজ। তবে মীরসরাইয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণার আগে বিদেশি বিনিয়োগের কার্যক্রম শুরু হয়েছে জোরেশোরে। এসব কার্যক্রমের শুরুতে স্বার্থান্বেষী মহলের নানা প্রতিবন্ধকতা বিনিয়োগে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক।
urgentPhoto
দেশে ২১টি জায়গায় প্রায় ৩০ হাজার একর জমিতে নতুনভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল। এরই মধ্যে সর্ববৃহৎ ১০ হাজার একরের অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে মীরসরাইয়ে। পাঁচ হাজার একর জমি জেলা প্রশাসন হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) কাছে। এরই মধ্যে মীরসরাইয়ে কাজ শুরু করেছে থাইল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান সিপি বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড।
প্রতিষ্ঠানটির সহকারী ব্যবস্থাপক রাকিবুল ইসলাম জানান, সম্পূর্ণ বিদেশি বিনিয়োগে মীরসরাইয়ে প্রায় ৪০ একর জায়গার ওপর আধুনিক প্রযুক্তিতে হ্যাচারি, ফিডার, ব্রয়লার, ফুড ও চিকেন জোনের চারটি প্রকল্প তাঁদের নির্মাণাধীন। উপজেলার টেরিয়াল এলাকায় হ্যাচারি থেকে বাচ্চা উৎপাদন করা হচ্ছে। এ ছাড়া ব্রয়লার ফিড প্রকল্পসহ তিনটি প্রকল্প চলমান। এর একটি মীরসরাইয়ে মঘাদিয়া মৌজার ১০ একর এলাকায় পোলট্রি খামার চালু করা হয়েছে। বছরে ২১ লাখ ৬০ হাজার ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে থাইল্যান্ডের কোম্পানিটি।
তবে মীরসরাইয়ে এ প্রতিষ্ঠানের চারটি প্রকল্প চালু হলে চট্টগ্রামে মাংসের চাহিদার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক হবে বলে মনে করেন সিপি বাংলাদেশ কোম্পানির উপদেষ্টা মাহাবুবুল আলম চৌধুরী। এনটিভি অনলাইনকে তিনি জানান, থাইল্যান্ড থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্যসম্মতভাবে মুরগি উৎপাদন করছে। এসব মুরগির পাশাপাশি ডিম ও বাচ্চা উৎপাদনের হ্যাচারি, মুরগি ও মাছের খাবার তৈরি করতে বৃহৎ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। উৎপাদিত এসব খাদ্যপণ্য শতভাগ মানসম্মত, কমমূল্য, গুণগতমানে উন্নত বলে জানান তিনি। এরই মধ্যে ২০০ মিলিয়ন (২০ কোটি) মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে। চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে বৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। এখানে আরো বিনিয়োগ হবে। থাইল্যান্ডের কোম্পানি প্রথম বিনিয়োগ করেছে। অন্যান্য দেশও এ অঞ্চলে বিনিয়োগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এসব এলাকায় শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হলে স্থানীয় লোকজনও উপকৃত হবেন।
জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন জানান, দেশে মুরগি, ডিম, বাচ্চা ও এসব প্রাণীর খাদ্যের চাহিদা পূরণে বিনিয়োগ করছে থাইল্যান্ডের সিপি প্রতিষ্ঠানটি। অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার শুরুতে নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। তবে যেকোনো সমস্যা মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর বলে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক বলেন, সিপি কোম্পানি মীরসরাইয়ে বিশাল কারখানা করেছে। এসব এলাকায় এ প্রতিষ্ঠান কয়েক ধরনের পণ্য উৎপাদন করছে। মুরগির বাচ্চা বাজারজাত ও খাদ্য উৎপাদন করছে। তিনি বলেন, ‘দেশে মুরগির যে চাহিদা স্থানীয়ভাবে আমরা পূরণ করতে পারি না, থাইল্যান্ডের এ প্রতিষ্ঠানটি আসার পর অনেক বাচ্চা উৎপাদন করে বাইরে বাজারজাত করছে।’ তিনি বলেন, মীরসরাইয়ে কিছু অতিলোভী মুনাফাখোর একচেটিয়া ব্যবসা করে আসছিল। এখন দেখছে তাদের ব্যবসা কমে যাবে। এ কারণে সিপির বাজারজাতকরণসহ এ বিদেশি প্রতিষ্ঠানটিকে তারা বাধা দিচ্ছে। তিনি বলেন, এলাকার কিছু স্বার্থান্বেষী মহল বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে মাসোয়ারা আদায় করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
তবে তিনি আশা করেন, এসব অপতৎপরতা বন্ধ না করলে কঠোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে প্রশাসন। এর মাত্রা বেশি হলে বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব অপতৎপরতা রোধে তৎপর রয়েছে বলে জানান তিনি।
এ ছাড়া আনোয়ারা অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৭০০ একর ও আনোয়ারার গহিরায় ৬০০ একর ভূমির উন্নয়নে কাজ চলছে। আনোয়ারার দুই প্রকল্পে ৩০০ একর ভূমি বেজাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসবের পুরোটা খাস। জেলা প্রশাসক জানান, সেসব জায়গার তহবিল আছে। জেলা প্রশাসন অধিগ্রহণ করবে। এ ছাড়া আনোয়ারা গহিরা অঞ্চলের ২০০ একর খাসজমি রয়েছে। বাকি জমি অধিগ্রহণ করা হবে। জেলা প্রশাসন তিন পর্যায়ে এসব এসব কাজ করবে।
এ ছাড়া এলাকার অগ্রগতি, রাস্তা উন্নয়ন ও প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ এসব কাজ করবে। বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কীভাবে এসব প্রকল্পের কাজ দ্রুত করা যায়, এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর তৎপর বলে জানান জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন।