দাম বাড়লে রুটিন তদন্ত, কমলে খোঁজও নেই
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/08/01/photo-1438419733.jpg)
কোনো শেয়ারের দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়তে দেখা গেলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কাছে তার কারণ জানাতে চাওয়া হয়। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে এটি স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষের রুটিন কাজ। তবে যেসব কোম্পানির শেয়ারের দামে এক সময় উল্লম্ফন হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে টানা পতন হয়ে দাম অভিহিত মূল্যের কাছাকাছি নেমেছে; তাদের ক্ষেত্রে তেমন নজরদারি দেখা যায় না।
স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ার কারণ জানতে চাইলে কোম্পানিগুলো গতানুগতিক উত্তর দেয়। প্রতিটি কোম্পানিরই একই জবাব, ‘শেয়ারের দাম বাড়ায় সংবেদনশীল কোনো তথ্য নেই।’ এতে সংশ্লিষ্ট শেয়ারের দাম বাড়ার প্রকৃত কার্যকারণ জানা সব বিনিয়োগকারীর ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। এতে এক শ্রেণির বিনিয়োগকারী মুনাফা লুটলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা সৃষ্টি হয়।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মুখপাত্র সাইফুর রহমান বলেন, ‘আমরা কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ার প্রকৃত কারণকে গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কারণ এর মধ্যে বিনিয়োগকারীদের লাভ-লোকসানের বিষয় যুক্ত। কোনো শেয়ারের দাম কারণ ছাড়া বাড়লে তা এক সময় অবশ্যই পড়বে। সে ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। তাই এটা নিয়ে আমাদের ভাবনাও বেশি। কিন্তু শেয়ারের দাম কমলে তা এক সময় অবশ্যই বাড়বে। এটা নিয়ে আমরা খুব বেশি চিন্তিত নই। মূলত শেয়ারের দর বাড়া-কমা একটি আরেকটির পরিপূরক।’
সাধারণ বিনিয়োগকারী আরিফ মনে করেন, কোনো কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর উৎপাদন না হলে কিংবা হিসাব-বছর শেষে লভ্যাংশ না দিলে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে তেমনভাবে জবাবদিহি করা হচ্ছে না। এ ধরনের কোম্পানিগুলো বেশির ভাগ শেয়ারহোল্ডারের অনুপস্থিতিতে নামমাত্র বার্ষিক সাধারণ সভা করে আর্থিক বিভিন্ন বিষয়ে অনুমোদন নিয়ে নেয়। এভাবে বছরের পর বছর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আর্থিক সুবিধা নিলেও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপকরা আইন লঙ্ঘন করে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে, তা দেখা হচ্ছে না।
সাধারণ বিনিয়োগকারী রতন হাওলাদার অভিযোগ করেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আইপিওর মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ করছে। অতিরিক্ত প্রিমিয়াম নিচ্ছে। লেনদেন শুরুর কিছুদিন এই কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ে। শুরুর দিকে দাম বাড়লে তার কারণ জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু কিছু দিন পর শেয়ারের দাম কমে অভিহিত মূল্যের কাছে নেমে এলে তার কারণ জানতে চায় না স্টক এক্সচেঞ্জ। এ ক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা নিরূপায়।
বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, গত দুই বছরের মধ্যে ঢাকা ডায়িংয়ের শেয়ারের সর্বোচ্চ দাম ৩১ টাকা ৪০ পয়সা ও সর্বনিম্ন ৯ টাকা ৭০ পয়সা। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে দাম ১৪ টাকা ৭০ পয়সা।
গত দুই বছরের মধ্যে ফ্যামিলিটেক্সের শেয়ারের সর্বোচ্চ দাম ছিল ৬৮ টাকা ৬০ পয়সা ও সর্বনিম্ন দাম ১২ টাকা ৬০ পয়সা। সর্বশেষ এর দাম দাঁড়িয়েছে ১৩ টাকা ৯০ পয়সা।
ডিএসইর সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়ার কারণ ডিএসই বিনিয়োগকারীদের জানাতে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে নোটিশ পাঠায়। কী কারণে শেয়ারের দাম বাড়ছে তা বিনিয়োগকারীদের জানা প্রয়োজন। অনেক ক্ষেত্রেই কোম্পানির অনেক তথ্য সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পান না। কিন্তু কিছু লোক তা পেয়ে মুনাফা লুটে নেয়।’
লালী বলেন, ‘ডিএসই জানতে চাইলেও প্রতিষ্ঠানগুলো গতানুগতিক উত্তর দেয় যে, দাম বাড়ায় মূল্য সংবেদনশীল কোনো তথ্য নেই। আবার দুই বা তিন মাস পর ঠিকই কোনো না কোনো তথ্য বের হচ্ছে। এতে কিছু লোক ফায়দা লুটে নেয়। আর ক্ষতির সম্মুখীন হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। দুঃখের বিষয়, এমনটা শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, অন্য দেশে এমনটা হয় না। কোম্পানিগুলোর উচিত সব তথ্য সবাইকে জানানো। তাহলে সেসব তথ্যের এর ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ করতে পারেন সব বিনিয়োগকারী। তবে উঠতি সময়ে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে প্রবেশ করলে বেশি ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। কারণ, শেয়ারের দাম একবার বাড়লে পরে কমবে; এটাই বাজারের নিয়ম।’
শেয়ারের দাম ধারাবাহিক কমার ক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষের তেমন আগ্রহ নেই বলে জানান আইডিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘ম্যানুপুলেশন ও পারিপার্শ্বিক খবরে অনেক সময় শেয়ারের দর বাড়তে পারে। আর তা ধারাবাহিক হলে সে ক্ষেত্রে তার কারণ জানতে চাওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে কোম্পানির জবাব বাজারে কোনো প্রভাব ফেলেছে বলে আমার জানা নেই। সবচেয়ে বড় কথা হলো বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের তথ্য যাচাই-বাছাই করে জেনে বুঝে বিনিয়োগ করা উচিত।’
সাধারণ বিনিয়োগকারী ফয়েজ উদ্দিন বলেন, আমাদের টাকায় কোম্পানির বিভিন্ন পরিচালন ব্যয় মেটানো হয়। সব ঠিক মতো চললেও প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ও আয় বাড়ে না। আর সম্পদমূল্য কমলে আয় না বাড়লে লভ্যাংশ না দিলে শেয়ার দাম কমে যায়। এজিএম হলেও দায় এড়িয়ে যায় প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তার জন্য প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তাহলে আমরা যারা প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার কিনলাম আমাদের কী হবে?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেলে স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ নোটিশ দেয়। এটি একটি রুটিন ওয়ার্ক।’
কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে কমলে স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ কখনো নোটিশ করেছে কি না জানতে চাইলে বলেন, ‘সে ব্যাপারে কিছু জানি না।’