জেলাভিত্তিক বিশেষায়িত পণ্য উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে : বাণিজ্যমন্ত্রী
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/08/20/photo-1440084015.jpg)
প্রতিটি জেলায় একটি করে বিশেষ পণ্য উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, যদি আমরা এভাবে জেলাভিত্তিক বিশষায়িত পণ্য উৎপাদন করে সেগুলোকে ‘ভৌগলিক নির্দেশক’ পণ্য (জিআই) হিসেবে নিবন্ধন করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং হবে। এতে ওই পণ্যের মূল্য বাড়বে, দেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার ভবনে ‘ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের গুরুত্ব এবং এই পণ্য হিসেবে নিবন্ধন পেতে বিদ্যমান চ্যালেঞ্চ ও করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) ও বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট (বিএফটিআই) সেমিনারের আয়োজন করে।
বিএফটিআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলী আহমেদের সঞ্চালনায় সেমিনারে ডিসিসিআই সভাপতি হোসেন খালেদ, সাবেক বাণিজ্য সচিব সুহেল আহমেদ চৌধুরী, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্ষ শহীদুর রহমান ভূইয়া, শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের (ডিপিডিটি) উপনিবন্ধক ইলিয়াস হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল ইসলাম, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষক উম্মে শেফা রেজবানা, ডিসিসিআই সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শহীদুল ইসলাম প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।
সেমিনারে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের ওপর গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএফটিআইয়ের গবেষক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ ও শেখ রুখসানা বোরহান।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশে আমরা অনেক বিশেষায়িত পণ্য উৎপাদন করি। যেমন- জামদানি শাড়ি, ইলিশ মাছ, মহিষের দই, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম। আমার মনে হয়, এগুলো অন্য কোথাও উৎপাদন হয় না। এসব পণ্যকে জিআইয়ের আন্তর্ভুক্ত করতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
তোফায়েল আহমেদ আরো বলেন, বাংলাদেশের বিশেষায়িত পণ্য জিআইয়ের নিবন্ধন পেলে দেশ হিসেবে আমরা বিশ্বব্যাপী যেমন ব্র্যান্ডিং পাব, তেমনি দেশীয় পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যও বাড়বে।
ডিসিসিআই সভাপতি হোসেন খালেদ বলেন, ঢাকা চেম্বারের পক্ষ থেকে ৭২টি বিশেষায়িত পণ্যের তালিকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছিল। এখন আমরা সরকারকে অনুরোধ করব-জেলাভিত্তিকভাবে বাছাই করে এ পণ্যগুলোকে ব্র্যান্ডিং করার উদ্যোগ নেওয়া হোক। শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যৌথভাবে ব্র্যান্ডিংয়ের কাজ করতে পারে। ভালোভাবে ব্র্যান্ডিং করতে পারলে, জিআই নিবন্ধন পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সেমিনারে উপস্থাপিত গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের চাহিদা যেমন ভালো, তেমনি এর জন্য বাড়তি দাম দিতেও রাজি থাকেন ক্রেতারা। বিভিন্ন দেশে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি দাম দিয়ে এসব পণ্য কেনেন ক্রেতারা। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জিআই পণ্য নিবন্ধিত হলে ওই পণ্যকে ঘিরে প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগও আসে। এসব সুযোগ নিতে পারে বাংলাদেশও।
প্রবন্ধে আরো উল্লেখ করা হয়, যে পণ্যগুলো বিশ্বে বাংলাদেশকে পরিচিত করেছে তার একটি মসলিন। মসলিনেরই টিকে যাওয়া একটি ধরন জামদানি। ঐতিহ্যগতভাবে জামদানি বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য। দেশে-বিদেশে এর গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণও রয়েছে।
এত কিছুর পরও ভারতের অন্ধ প্রদেশ ২০০৯ সালে জামদানিকে তাদের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে নিবন্ধন করেছে। এর নাম দিয়েছে ‘উপাদ্দা জামদানি’। অথচ, বাংলাদেশ এখনো নিজেদের জামদানিকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনই করতে পারেনি।
গবেষণাটি বলছে, বাংলাদেশকে জিআই নিবন্ধনে ভালো করতে হলে এ ক্ষেত্রে গবেষণা বাড়াতে হবে। বিভিন্ন পণ্যের ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও সংরক্ষণে নজর দিতে হবে। বিশেষ করে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। পণ্যের জিআই নিবন্ধনের জন্য যথাযথভাবে তথ্য-উপাত্তসহ তাদেরই ডিপিডিটিতে আবেদন করতে হবে।
বিএফটিআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলী আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্যের নিবন্ধনের পাশাপাশি পণ্যের গুণগত মান বাড়ানো এবং প্যাকেজিং ব্যবস্থার মানোন্নয়নের ওপর আরো জোর দিতে হবে। ভারতে আন্তর্জাতিকভাবে নিবন্ধিত পণ্যের সংখ্যা ৪০০টি। তাই আমাদের উৎপাদিত পণ্য নিবন্ধনের প্রক্রিয়া আরো বেগবান করতে হবে।