শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি
দেশের জনসম্পদকে মানবসম্পদে পরিণত করার অন্যতম হাতিয়ার শিক্ষা। তাই বাজেট প্রণয়নের সময় শিক্ষা খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়াটা জরুরি। কিন্তু বাজেটে শিক্ষা খাতে বাজেট বাড়ানোর বদলে কমছে। ফলে ছাত্রছাত্রীর হার কয়েকগুণ বাড়লেও কমেছে শিক্ষার মান। তাই শিক্ষার মান বাড়াতে এই খাতে বাজেট বাড়ানোর দাবি জানালেন শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদরা।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ‘সরকারের যে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষানীতি, যেটা এখন চালু আছে। সেখানে বলা আছে, ২ শতাংশ থেকে এটাকে ৬-৮ শতাংশে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩ শতাংশে আমরা আর যেতে পারছি না। ২০০২ থেকে ২০১৮—১৬ বছর ধরে! অর্থ ব্যয় করতে হবে প্রধানত শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে। উন্নত, মেধাবী লোকেরা যাতে শিক্ষকতায় আসে। সে জন্য তাদের উপযুক্ত বেতনের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার যদি অর্থ ব্যয় করে, ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে, ভালো শিক্ষক নিয়োগ দেয়। তাহলে প্রচুর অর্থ দিতে পারে এবং আস্তে আস্তে বেসরকারি পণ্যভিত্তিক যেসব শিক্ষা আছে, সেই শিক্ষাগুলো থেকে মানুষ তখন সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে পারে। আর সর্বোপরি সেটা না করলে পরে, আমাদের মানবসম্পদ তৈরি হবে না। মানবসম্পদ তৈরি না হলে পরে আমরা নিম্ন মধ্যম আয়েই ঠুকঠুক করতে থাকব। মধ্যম আয়ে আর আমাদের যাওয়া সম্ভব হবে না।’
শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘২০০০ সালে যেখানে মোট বাজেটের ১৪ শতাংশের ওপরে ছিল শিক্ষার জন্য বরাদ্দ, ২০১৭-১৮-এর দিকে গিয়ে সেটা ১০/১১ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০০০ সালের শিক্ষার্থীর সংখ্যা আর বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি। কিন্তু আমরা সেই কয়েকগুণ বিনিয়োগ করিনি। যথাসময়ে যথাযথ বিনিয়োগ দরকার। এখন আমরা যদি শুধু শিক্ষক প্রশিক্ষণে ব্যয় করি। একজন প্রশিক্ষিত শিক্ষক তার প্রশিক্ষণকে নিয়মিত তার শ্রেণিকক্ষে কাজে লাগাচ্ছেন কি না। সেটার জন্য যে রকম তদারকি-দেখভাল দরকার আছে, একই সঙ্গে দরকার আছে, সেই শিক্ষককে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া।’
গত অর্থবছরে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৪৫ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১১ শতাংশের কিছু বেশি। অথচ ২০০০ সালে এই বরাদ্দের হার ছিল ১৪ শতাংশ। জিডিপির হিসাবে এই বরাদ্দ ২ শতাংশের কাছাকাছি। অর্থাৎ বাজেট বরাদ্দ কয়েকগুণ বাড়ার বদলে কয়েক গুণ কমেছে।
অথচ শিক্ষা খাতে ৬ শতাংশ বা মোট বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ দিতে সরকারের অঙ্গীকার রয়েছে। তাই শিক্ষা ও অর্থনীতিবিদদের মতে, অর্থ বরাদ্দই এখন শিক্ষার উন্নয়নে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে গ্রাম-শহর, সরকারি-বেসরকারিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব বৈষম্য আছে, তা বিবেচনায় নিয়ে বিনিয়োগ কৌশল ঠিক করতে হবে বলেও পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞেরা।