মোংলা ব্যবহার করে ট্রানজিট সুবিধা নিল নেপাল
চুক্তি স্বাক্ষরের পর এই প্রথম মোংলা বন্দর ব্যবহারের মধ্য দিয়ে ট্রানজিট সুবিধা নিচ্ছে নেপাল। নেপালে রপ্তানির জন্য চীন থেকে প্রায় ২৫ হাজার ৩৫০ টন সার আমদানি করেছে আন্তর্জাতিক আমদানিকারক খুলনার দেশ ট্রেডিং করপোরেশন।
আমদানিকৃত এ সার নিয়ে ‘এম ভি ঠেটো টোকজ’ জাহাজ আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় মোংলা বন্দরে ভিড়েছে। সেখান থেকে পণ্য খালাস করে নৌপথে যশোরের নওয়াপাড়া নেওয়া হবে। তারপর যশোর থেকে মালবাহী ট্রেনে করে ভারতের বীরগঞ্জ হয়ে যাবে নেপালে। গত দেড় মাস আগে চীন থেকে এ জাহাজটি মোংলা বন্দরের উদ্দেশে ছেড়ে আসে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সূত্র জানায়, ভারত, ভুটান ও নেপাল ট্রানজিট (বাংলাদেশের ভূ-খন্ড ব্যবহার) সুবিধায় মোংলা বন্দর ব্যবহারের নীতিগত সিদ্ধান্ত অনেক আগেরই। কিন্তু বাকি ছিল এর আনুষ্ঠানিকতা। দেরিতে হলেও তা বাস্তবায়ন হয়েছে। অবশেষে নেপালের ট্রানজিট পণ্য মোংলা বন্দরের পৌঁছেছে। এ সার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খুলনার মেসার্স লিটমন শিপিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপক সৈয়দ মর্তুজা আলী বাপ্পী বলেন, ‘এম ভি ঠেটো টোকজ থেকে প্রাথমিকভাবে ছোট লাইটারেজে (কার্গো জাহাজ) করে সার খালাস করে তা যশোরের নওয়াপাড়ায় নেওয়া হবে। এরপর সেখান থেকে মালবাহী ট্রেনে করে যশোর-বেনাপোল হয়ে ভারতের বীরগঞ্জের উপর দিয়ে নেপালে যাবে এ সার।’ নেপালের সঙ্গে ট্রানজিট চুক্তির পর মোংলা বন্দরের মাধ্যমে এই প্রথম পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বলেও জানান সৈয়দ মর্তুজা আলী বাপ্পী। তিনি আরো বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেলের পালা থেকে ওই জাহাজে শ্রমিক বুকিং করে সার খালাস কাজ শুরু হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জাহাজের পুরো পণ্য খালাস শেষ হবে।
গত দেড় মাস আগে চীন থেকে এ জাহাজটি মোংলা বন্দরের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। জাহাজে করে আনা নেপাল সরকারের এ সারের আমদানি মূল্য ১ কোটি ১১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা এবং রপ্তানি মূল্য ১ কোটি ৩২ লাখ ৩৭ হাজার ৭৭০ টাকা বলে জানিয়েছেন আর্ন্তজাতিক আমদানিকারক দেশ ট্রেডিং করপোরেশনের মালিক মো. আমিনুর রশিদ। তিনি আরো বলেন, ‘চীন থেকে নেপালের জন্য প্রতি এক হাজার টন ৪৪০ ডলার দিয়ে ঢালাই সার আমদানি করে তা স্থানীয়ভাবে মোড়কজাত করে ৫২২ দশমিক ২০ ডলারে প্রতি হাজার টন সার রপ্তানি করা হচ্ছে। এ দফায় মোট ২৫ হাজার ৩৫০ টন সার আমদানি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র আরো জানায়, ট্রানজিটের বিপরীতে কোনো শুল্ক আদায় করার সুযোগ নেই। তবে এই পণ্য পরিবহণের অবকাঠামো ব্যবহার, তা রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ইত্যাদির সেবার জন্য মাশুল আদায় করা যাবে। বার্সেলনা কনভেনশনের ধারা ৩ এ ট্রানজিটের অধিকার দিতে কোনো ধরণের অর্থ গ্রহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে তবে ট্রানজিট পরিচালনা ব্যয় নির্ধারণ করে তা আদায় করার সুযোগ রেখেছে। গ্যাটের পঞ্চম ধারার ৩ থেকে ৬ উপ-ধারার শর্ত অনুসারে দুই ভাগে মাশুল আদায় করা যায়। পণ্য প্রবেশ ও বর্হিগমন পয়েন্টে বিভিন্ন সেবার বিনিময়ে মাশুল ও সার্ভিস চার্জ আদায় ও ট্রানজিট পণ্যবাহী যানবাহনের ওপর নিবন্ধন ফি, শুল্ক ও কর, টোল ইত্যাদি অথবা মাশুল আদায় করা যায়। স্থানীয় পরিবহণ ও ট্রানজিট পরিবহনের জন্য এসব ফি একই হারে প্রযোজ্য হবে।
তবে বাংলাদেশের শুল্ক আইনে ট্রানজিট বাবদ ফি ও সার্ভিস চার্জ আরোপ-সংক্রান্ত ধারা ১২৯ অর্থবিল ২০১১-১২ দ্বারা বাতিল করা হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশে ট্রানজিট মাশুল আরোপের আপাতত কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে মোংলা বন্দরের পণ্য আমদানিকারক ব্যবসায়ী এইচ এম দুলাল ও সৈয়দ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ভারত, নেপাল ও ভূটান মোংলা বন্দরের ট্রানজিটের (বাংলাদেশের ভূ-খন্ড ব্যবহার) ব্যবহারের মাধ্যমে এ বন্দরে পণ্য খালাস-বোঝাইয়ের পরিমান অনেক বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে জাহাজের সংখ্যাও বাড়বে। এ জন্য এ অঞ্চলে কর্মসংস্থান যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি অর্থনৈতিক অবস্থার অনেক উন্নতি হবে’
মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী মেসার্স নুরু এন্ড সন্সের মালিক এইচ এম দুলাল ও মেসার্স খুলনা ট্রেডার্সের মালিক সৈয়দ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ট্রানজিটের ফলে মোংলা বন্দরের ওপর চাপ বাড়বে। এজন্য বন্দরের সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি করতে হবে। বন্দরের ফেয়ারওয়েতে ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন, জেটিতেও আমাদের আট মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে তার জন্য ড্রেজিং করতে হবে। ড্রেজিং না করার কারণে বেশিরভাগ জাহাজের অর্ধেক পণ্য চট্রগ্রাম বন্দরে খালাস করতে হয়। জাহাজের পুরো পণ্য মোংলা বন্দরে খালাস করতে পারে সেক্ষেত্রে অনতি বিলম্বে ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।’
গত ১৭ সেপ্টেম্বরের বাংলাদেশের সাথে ভারত, নেপাল ও ভুটানের ট্রানজিট চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর একেএম ফারুক হাসান বলেন, ‘মোংলা বন্দরে ট্রানজিটের ব্যাপারে আমরা অনেক আগে থেকেই প্রস্তুত আছি। এখন ট্রানজিট সেবা দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত এ বন্দর। তবে বন্দরের সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি করতে বেশ কয়েকটি নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।