পাঁচ বছরে শ্রমিকদের মজুরি ২১৯ শতাংশ বেড়েছে : বিজিএমইএ সভাপতি
তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সমিতির (বিজিএমইএ) নবনির্বাচিত পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, ‘শ্রম আইনে পাঁচ বছরে শ্রমিকদের মজুরি বাড়ার বিধান রয়েছে। তবে এই সময়ে দুই দফায় শ্রমিকদের বেতন ও মজুরি ২১৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। মজুরি, গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পরিবহনের খরচ বাড়ায় বছরের ব্যবধানে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ১০ শতাংশ। তবে প্রতিযোগিতার বাজারে পণ্যের দাম কমেছে। ফলে পোশাক খাত নিয়ে আমরা এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছি।’
আজ শনিবার বিজিএমইএর নবনির্বাচিত পরিচালনা কমিটির পরিচিতি অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন মো. সিদ্দিকুর রহমান।
বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ক্রেতাদের চাহিদা মোতাবেক কারখানা ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিধানে প্রতিটি কারখানাকে গড়ে আকার ভেদে পাঁচ থেকে ২০ কোটি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এটি প্রতিটি কারখানার জন্য বাড়তি বোঝা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ খাত একটা খারাপ সময় পার করছে। আর টাকাসহ বিভিন্ন মুদ্রার বিপরীতে ডলারের মূল্য কমায় পোশাকের দরপতন দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রসহ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১২টি দেশ ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশ এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে পারেনি। ফলে এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশ।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘১২টি দেশের মধ্যে ভিয়েতনাম আমাদের প্রতিযোগী দেশ। তারা বিনা শুল্কে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রফতানি করতে পারবে। অতিরিক্ত শুল্ক দিতে গিয়ে পিছিয়ে পড়তে পারে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ কীভাবে এই চুক্তিতে সম্পৃক্ত হতে পারে সে জন্য সরকারকে কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
বাংলাদেশের পোশাক খাতের সক্ষমতা বাড়াতে নতুন কমিটি বেশ কিছু বিশেষ এজেন্ডা নিয়ে কাজ করবে বলে জানান সিদ্দিকুর রহমান। এর মধ্যে ব্যাংকের উচ্চ সুদের হার কমানো ও রপ্তানিকারকদের জন্য আলাদা ডলারের দাম নির্ধারণের দাবি জানান তিনি।
এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাগুলোকে ১০ বছর মেয়াদে পুনঃতফসিলীকরণের সুযোগ দেওয়া, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানো, ক্যাপটিভ পাওয়ার জেনারেশনের ক্ষেত্রে ১০০ ভাগ দাম না বাড়িয়ে তা ধাপে ধাপে বাড়ানোর দাবি করেন তিনি।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ট্রেড লাইসেন্সের ফি কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৩ হাজার শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, যা দেশের শিল্প বিকাশে একটি বড় বাধা হতে পারে। লাইসেন্স ফি কমানোর জন্য এরই মধ্যে সরকারের সঙ্গে ইতিবাচক আলাপ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ দেশের শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা ভিয়েতনাম ও চীনের চেয়ে ২৫ শতাংশ কম। এ অবস্থা থেকে উন্নতি করতে এরই মধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সমস্যার সমাধান ও দেশের পরিস্থিতি ভালো হলে আগামী ২০২১ সাল নাগাদ আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাক রপ্তানির শেয়ার ৫ থেকে ৮ শতাংশ বাড়বে। এ সময়ের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যপূরণ আমাদের জন্য কঠিন হবে না। সে লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে বিজিএমইএ।’