আমরা বিপদে আছি : অর্থমন্ত্রী
দেশের চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় মানুষের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, এ পরিস্থিতি বেশিক্ষণ চলতে থাকলে অর্থনীতির ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে।
চলমান পরিস্থিতিতে দেশের বস্ত্র খাতের তিন সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএ, চামড়া খাতসহ রপ্তানিকারক অন্যান্য সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আজ সোমবার এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।
দেশের চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির বিষয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘এবারের সমস্যাটা একদমই অপ্রত্যাশিত। এটার কোনো প্রয়োজন ছিল না। আমরা বিপদে আছি। দুই মাস ধরে সেই বিপদটা চলছে। এর প্রভাব দুই মাসে হয়তো ততটা পড়েনি। আগের রপ্তানি আদেশ থাকাসহ অন্যান্য কারণে এটি হয়নি। তবে এর বড় প্রভাব পড়বে। কারণ এখন নতুন ক্রয়াদেশের সময়। সেই আদেশ কীভাবে হচ্ছে...।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সবচেয়ে চিন্তিত এ জন্যে, বিভিন্ন দেশ যে ভ্রমণ পরামর্শ দিয়েছে, সেখানে আমাদের এখানে লোকজনকে আসতে একটু সাবধান করে দিয়েছে। এটা নিয়ে আমি বস্তুত খুবই উদ্বিগ্ন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও আলাপ করব। আমরা দেখছি, এ ব্যাপারে কী করা যায়।’
ব্যবসায়ীদের দাবির বিষয়গুলো সম্বন্ধে এখনই মন্ত্রব্য করতে পারবেন না জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এগুলো হবে চাহিদার পরিমাণ ও কারণের ভিত্তিতে। চাহিদার কারণ তো স্পষ্ট। আপনারা সবাই বুঝতে পারছেন কেন এটা হয়েছে।’
ব্যবসায়ীদের আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘দুই মাস ধরে একটা অস্বাভাবিক অবস্থা চলছে। আমি বলব না যে, এটা জীবনধারণ, জীবনপ্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। আমি এখন আরো জোরেসোরে বলতে পারি। কারণ, আমি এরই মধ্যে বিভিন্ন জেলা ঘুরে এসেছি। জীবনপ্রবাহ ঠিকই আছে। কিন্তু এই যে আদেশের ভিত্তিতে আপনারা কাজ করছেন, এর ভবিষ্যৎ কী? পরবর্তী মাস, কাল লেগে যাবে— এটা হচ্ছে ভয়ঙ্কর, সবচেয়ে অসুবিধার কথা। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, একটি ভীতি। ভীতি অর্থনীতিতে মারাত্মক। এটা শুধু বস্ত্র খাতের ব্যাপার না। এটি সাধারণ পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রেও রয়েছে। এই ভীতিটা মারাত্মক। ভীতিকর পরিস্থিতি বেশি সময় চললে অর্থনীতির ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে।...
আপনার কাজও বাধাপ্রাপ্ত হবে। আপনি জানলেন যে আপনার ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আরো মানুষ তো সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত। সে ক্ষেত্রে ব্যয় বেড়ে যাবে। বিশেষ পরিবহন খরচ বাড়ে বেশি। সবকিছু হিসাব করলে বড় ধরনের অঙ্ক দেখা যাবে। এ ব্যাপারে আমি চিন্তিত। কী ভবিষদ্বানী দেব? কতদিন চলবে? রাস্তার শেষটা দেখতে হবে। সেটার কোনো ইঙ্গিত এখন পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না। এ জন্য আমি কয়েকদিন ধরে বলছি, এটা বিএনপির দায়িত্ব। এ দলের যারা সমর্থক তাদের দায়িত্ব। এ পরিস্থিতি সবার জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তারাও দেশের নাগরিক। তাদের জীবনেও প্রভাব পড়ছে। তাদের এটা শেষ করবে। কিন্তু কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না।’
ব্যবসায়ীদের চাহিদা ও দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে মুহিত আরো বলেন, ‘এটা জাতীয় সংকট। জাতীয় সংকট বলতেও আবার ভয় করে। কারণ জাতীয় সংকট বললে তো বিরাট ব্যাপার হয়ে যায়। তবে এটা বিরাট নয়। তবে এটা মারাত্মকভাবে অর্থনীতির অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে (ইট এজ আ সিরিয়াস ইমপেডিবল টু প্রগ্রেস)। আর সময়টাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। দুই মাস চলে গেছে। এখন আমার যে ধরে রাখার শক্তিটা ছিল, সেটা কমে যাচ্ছে। যতদিন যাচ্ছে, ততই এটা অসহনীয় হয়ে উঠছে।... এতে আপনারাও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। আমাদেরকে কিছু করতে হবে। সেটা হিসাব করতে হবে। চিন্তা করতে হবে। কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্তত মানিয়ে রাখতে হবে। কী পদক্ষেপ নেব সেটা ভাবতে হবে। আপনাদের সঙ্গে শিগগিরই আবার বসব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রীর বক্তেব্যের আগে ব্যবসায়ীদের দাবি তুলে ধরেন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের সহায়তা করলে দেশের অর্থনীতির সব সূচক আমরা এগিয় নিয়ে যাব।’
আতিকুল ইসলাম দেশের চলমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন খাতের ক্ষতির ও লোকসানের বিষয়গুলো তুলে ধরেন। তিনি জানান, ‘৯২ কোটি টাকার ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছ। বিভিন্ন কারণে ৪০টি ফ্যাক্টরিতে এ পর্যন্ত ১৯০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী, সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা।